দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: চারিদিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট। ঢালাও অর্থ ব্যয়ে সাজানো বাগান শুকিয়েছে বহু আগেই। বিভিন্ন সৌন্দর্যায়িত মডেল পড়ে রয়েছে ভগ্নদশায়। ভাগীরথীর উপর সবুজ সুন্দরী মঙ্গলদ্বীপ তাই আজ যেন পরিত্যক্ত মরুভূমি। যা স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণ কমিয়েছে পর্যটকদের। ভরা শীতের মরশুমেও সেখানে পাতলা ভিড়।
গঙ্গার পাড় ভাঙনের ফলে এবং পলি জমে প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয়েছিল মঙ্গল দ্বীপ। গঙ্গা নদীর মাঝে তৈরি সেই চরের একপাশে হুগলি এবং অন্য পাশে নদীয়ার রানাঘাট। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই মঙ্গলদ্বীপ নদীয়া জেলার রানাঘাট-১ ব্লকের মানচিত্রে স্থান পায়। পরবর্তীতে এই মঙ্গলদ্বীপকেই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। ইকো ট্যুরিজম পার্ক হিসেবে ভিতরে তৈরি করা হয়েছিল বিভিন্ন পরিকাঠামো। একদিকে যেমন ছিল থাকার জন্য গুটিকয়েক ঘর, তেমন পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা। এছাড়াও লক্ষ লক্ষ টাকা ধরচে বাগান তৈরি হয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। পরবর্তীতে এই সমস্ত কাজের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় একটি বেসরকারি সংস্থাকে। পিকনিকের মরশুম অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি, এই সময়কালে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক মঙ্গলদ্বীপ দেখতে অথবা চড়ুইভাতি করতে আসতেন। কিন্তু, চলতি বছর পর্যটনের মরশুম মধ্য গগনে চলে এলেও সেইভাবে দেখা নেই পর্যটকদের। বিশেষ করে রবিবার মঙ্গলদ্বীপে গিয়ে দেখা গেল, বড়দিনের মাত্র তিন দিন আগেও হাতেগুনে বলা যায় পর্যটকদের মোট সংখ্যাটা! কেন এই দুরবস্থা? কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে, কোটি কোটি টাকা খরচে তৈরি মঙ্গলদ্বীপের ইকো ট্যুরিজম পার্ক এবং পর্যটন পরিকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ প্রায় কিছুই হয়নি। ফলে এক প্রকার পরিত্যক্ত ভূমির মতো চেহারা হয়েছে সেই ইকো পার্কের। অগণিত ফুল গাছ দিয়ে সাজানো মঙ্গলদ্বীপের প্রবেশদ্বারের সামনের অংশটিতে এখন কেবল গড়াগড়ি খায় ফুলগাছের ফাঁকা টবগুলি। পরিচর্যার অভাবে গাছগুলি শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পার্কের এক প্রান্তে পানীয় জলের যে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল তা দিয়ে জল পড়ে না। আগাছা এবং জঙ্গল ঘিরেছে মঙ্গলদ্বীপে থাকার জন্য তৈরি ঘরগুলি। অন্যান্য পরিকাঠামোর অবস্থাও তথৈবচ। প্রচুর টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছিল চিলড্রেনস পার্ক। সেটিও সংস্কারের অভাবে শ্রী হারিয়েছে। একাধিক জায়গায় বাতিস্তম্ভ থাকলেও তার সবকটি ঠিকমতো জ্বলে না। আর এই অব্যবস্থা দেখার মতো নেই কেউই। শেষ নয় এখানেই, অল্পবিস্তর যা পর্যটক আসা শুরু করেছেন তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অস্থায়ী পুলিস ক্যাম্পও এখনও তৈরি হয়নি। বনগাঁ থেকে আসা অমিত সূত্রধর বলেন, আগেরবার যখন আমি এসেছিলাম তখন এই পার্ক কত সাজানো ছিল। কিন্তু, এবারে এসে দেখছি ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। বড়দিন চলে এলেও বিভিন্ন জায়গায় আগাছা কাটার কাজ চলছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা অথবা প্রশাসন কী ঘুমিয়ে রয়েছে? বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট-১ ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক জয়দেব মণ্ডল বলেন, পর্যটনের জায়গা স্বমহিমায় রাখতে হবে। আমি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেব। যদিও ব্লকস্তর সূত্রের খবর, একাধিকবার ব্লকের তরফে ওই সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা গড়িমসি করে গিয়েছে। প্রশাসনের দাবিকে কার্যত কর্ণপাত করেনি তারা। ফলে ব্লকস্তরের কর্তাদের একটি অংশ কার্যতা ক্ষুব্ধ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে নিয়ে। তাঁরা চাইছেন নতুন চুক্তি হওয়ার সময় চুক্তিপত্রে কড়াকড়ি, করে তবেই দায়িত্ব দেওয়া হোক। - নিজস্ব চিত্র