• আব্বাসের মাদ্রাসা-কাণ্ডে তোলপাড়, এবার নাম জড়াল তৃণমূল বিধায়কের
    বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: হরিহরপাড়ার বারুইপাড়া হাটের মোড়ে আব্বাস আলির খারিজি মাদ্রাসার সঙ্গে শাসকদলের এক বিধায়কের যোগ পাওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, আব্বাস যে অবৈধভাবে সেখানে বাড়ি ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসা খুলেছিল, তা ভালোভাবেই জানতেন তিনি। স্বভাবতই আব্বাসের সঙ্গে বিধায়ককের ঘনিষ্ঠতা কতটা ছিল, সে ব্যাপারে তথ্য জোগাড় করছে পুলিস। 


    গত মঙ্গলবার ভোরে হরিহরপাড়া থেকে আব্বাস ও তার সহযোগী মিনারুল শেখকে গ্রেপ্তার করে আসাম রাইফেলস ও এসটিএফ। জঙ্গিযোগে হরিহরপাড়া এলাকার পরপর দু’জন গ্রেপ্তার হওয়ার পরই গোটা জেলাজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আসাম এসটিএফ। তদন্তকারীরা আব্বাস ও মিনারুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ পেয়েছেন নিষিদ্ধ জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) শীর্ষ জঙ্গিদের। এবিটি’র প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানির নির্দেশে বাংলাদেশ থেকে মুর্শিদাবাদে আসে মহম্মদ শাদ রবি ওরফে সাব শেখ। সে এখানে এসেই স্লিপার সেল তৈরির কাজে মন দেয়। তখনই আব্বাসকে দিয়ে খারিজি মাদ্রাসা খোলে শাদ রবি। সেখানে স্থানীয় কিশোরদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। কত কিশোর সেখানে পড়ছে, সে ব্যাপারে রীতিমতো জানতেন ওই বিধায়ক। 


    গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে, আব্বাসের সহযোগিতায় এই শাদ রবি নওদার এবং হরিহরপাড়া থেকে দুটি ভোটের কার্ড তৈরি করেছিল। ভোটার লিস্টে তার নাম ছিল মহম্মদ সাব শেখ। নওদার দুর্লভপুরের দক্ষিণপাড়াতে একটি বাড়িতে থাকত সে। তারপর হরিহরপাড়ায় নিজের ভোটের কার্ডটি স্থানান্তরিত  করে নেয় সে। হরিহরপাড়া ঠিকানাতেই একটি আধার কার্ডও তৈরি করে এই বাংলাদেশি জঙ্গি। ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি হওয়া যাওয়া মাত্রই সে পাসপোর্ট তৈরি করে। বাংলাদেশি এই কুখ্যাত জঙ্গির মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা হওয়ার খবর মিলতেই রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে। 


    নওদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা দুর্লভপুরের বাসিন্দা সইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এই এলাকায় বড় হয়েছি কিন্তু এই নামের কখনও কাউকে দেখিনি। ভোটের লিস্টে হয়ত ভুলবশত নাম উঠে থাকতে পারে।’ 


    ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘খারিজি মাদ্রাসাগুলি আরবি পড়ানোর জন্য মুসলিম সমাজের লোকেরা অর্থ দিয়ে চালনা করে। সরকার ইচ্ছা করলেই খারিজি মাদ্রাসার ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে পারে। আমিও একটি মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত। আমার মাদ্রাসায় তিনশোর বেশি ছাত্র আছে। আমরা শিক্ষকদের নিয়োগ করার সময় যাচাই করে নিই। তাঁদের বিভিন্ন তথ্য পরীক্ষা করে দেখি। আমার মাদ্রাসায় বিহার, ঝাড়খণ্ড রাজ্যেরও ছেলে আছে। অসহায় ছেলেরা অনেকের যাদের মা-বাবা নেই। তারা এখানে ভর্তি হয়। ছাত্ররা কোথা থেকে আসছে সব সময় শিক্ষকরা যাচাই করে উঠতে পারে না। তবে মাদ্রাসা যারা পরিচালনা করেন, তাঁদের সব সময় আরও বেশি সতর্ক হওয়া দরকার। 


    তিনি আরও বলেন, মুর্শিদাবাদ নিয়ে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেটা অমূলক। কেউ বাজে কাজ করলে তার জন্য কঠোর সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের সাজা দেওয়াও হচ্ছে। এর আগেও খাগড়াগড় কাণ্ডের সময় আমরা দেখেছিলাম, দোষীরা শাস্তি পেয়েছে। এবারও সকলে শাস্তি পাবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)