• জমি কেনার আগে আমাদের সঙ্গে কথা বলুন, রানাঘাটে বহু ক্লাবের দাদাগিরি নিয়ে ক্ষোভ
    বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: রাজ্য সরকার ক্লাবের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য এক সময় মোটা টাকা অনুদান দিয়েছে। পুজো হলে তার জন্যেও মেলে সরকারি টাকা। কিন্তু তারপরেও নাকি ক্লাবকে জানিয়ে এলাকায় জমি কেনাবেচা করতে হবে! কারণ, জমি কেনাবেচার মধ্যে নাকগলিয়ে ফাঁকতালে কিছু রোজগার করবে ক্লাব। রানাঘাট শহরের একাধিক ফাঁকা জমিতে পোস্টার দিয়ে এভাবেই দাদাগিরি চালাচ্ছে ক্লাবগুলি। এদের মাথায় কার ‘হাত’? প্রশ্ন আমজনতার। 


    একসময় পাড়ায় পাড়ায় ক্লাবগুলি ছিল সংস্কৃতি ও খেলাধুলো চর্চার পীঠস্থান। এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা, গঠনমূলক কাজ করাই ছিল ক্লাবগুলির প্রাথমিক লক্ষ্য। আজ সেইসব ক্লাব পরিণত হয়েছে জমির দালালির এজেন্সিতে। এলাকায় কেউ জমি বিক্রি করতে চাইলে তা করতে হবে ক্লাবকে। পরে সেই ক্লাব জমিটি বিক্রি করবে ক্রেতাকে! এই কেনাবেচার মাঝে ‘আয়’ করবে ক্লাব। সম্প্রতি রানাঘাট পুর এলাকার একাধিক ফাঁকা জমিতে এই মর্মে পোস্টার দিয়েছে বহু ক্লাব। এর মধ্যে একটি ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মদনমোহনপল্লীর স্বামী বিবেকানন্দ ক্লাব। অন্যটি নম্বর ১০ ওয়ার্ডের শক্তি সংঘ। নিজেদের ক্লাব সংলগ্ন ফাঁকা জমিতে পোস্টার লাগানোর অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ ক্লাবের পোস্টারে লেখা, ‹এই জমি কেউ ক্রয় করিবেন না›। কেন? প্রশ্নের উত্তরে ক্লাবের সম্পাদক অনিমেষ ঘোষ বলেন, আমাদের ক্লাবের কিছু ফান্ড আছে। আমরা ঠিক করেছিলাম সেই জমি আমরা কিনে আমরাই আবার বিক্রি করব। আমরা জমির মালিককে সেটা বলেছিলাম। উনি আমাদের না জানিয়ে বিক্রি করেছেন। আমরা ঠিক করেছিলাম এলাকার জমি কেনাবেচা করে যা কিছু আয় হবে তা দিয়ে আমাদের ক্লাবের জীর্ণ বিল্ডিং সরানো হবে। তাছাড়া যাঁর জমি তিনি ৩০ বছর থাকলেও চাঁদা দিতেন না। সেটার কী হবে? 


    কিন্তু যে ক্লাবের জমি কেনাবেচার বিপুল টাকা থাকে, সেই ক্লাব ওই অর্থে ক্লাব সারাচ্ছে না কেন? এই প্রশ্ন পাড়ারই একাধিক বাসিন্দার। ক্লাবের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার জয়ন্ত দাস বলেন, আমি এই সমস্ত বিষয়গুলিকে একদম প্রশ্রয় দেব না। আমার কানে আসেনি কথাটা এতদিন। ক্লাব কারও জমিতে পোস্টার লাগানোর মালিক নয়। চাঁদা দেওয়া না দেওয়া মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। মদনমোহনপল্লির বিবেকানন্দ ক্লাবের বিরুদ্ধে আমি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ জানাব। একই ছবি ধরা পড়েছে ১০ নম্বর ওয়ার্ডেও। তাও আবার রানাঘাট অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিস সুপার এবং এসডিপিও-র অফিসের থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই শক্তি সংঘ নামে স্থানীয় একটি ক্লাব পাশের জমিতে একটি ব্যানার লাগিয়েছে, ‘এই জমি ক্রয় করিবার পূর্বে শক্তি সংঘ ক্লাবের সাথে যোগাযোগ করুন।’ কোন অধিকারে তারা এই পোস্টার লাগিয়েছে? প্রশ্ন করছেন আশেপাশের ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দারা। বিষয়টি নিয়ে ক্লাবের এক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। ক্লাবের সম্পাদক এ বিষয়ে বলতে পারবেন। যদিও সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর চাওয়া হলেও তিনি দিতে অস্বীকার করেন।।  বিষয়টি নিয়ে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা রানাঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এটা বেআইনি কাজ। তাই এই ধরনের কাজ বরদাস্ত করা হবে না। বিষয়টা নিয়ে আমি এই জানতে পারলাম। কোনওভাবেই একটি ক্লাব অন্যের জমিতে পোস্টার লাগিয়ে এই ধরনের নির্দেশ দিতে পারে না। 


    (এভাবেই জমিতে পোস্টার সাঁটিয়ে জমি কেনাবাচায় ক্লাবের দাদাগিরি চলছে। নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)