বর্ধমানে বাড়বাড়ন্ত নকল নার্সিংহোমের, সর্বস্বান্ত বহু রোগীর পরিবার
বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: ভুয়ো ডাক্তার বাবা ও ছেলের নকল নার্সিংহোমে এসে সর্বস্বান্ত হয়েছে বহু রোগীর পরিবার। লক্ষ্মীপুরমাঠে তৈরি করেছে প্রাসাদসম তিনতলা দু’টি বাড়ি। রয়েছে একাধিক গাড়ি। রোগীদের টাকা হাতিয়ে তারা রাতারাতি বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছে। কোনও রোগীর পরিবার টাকা দিতে না পারলে বাড়ি এবং সোনার গয়না বন্ধক রাখতে বাধ্য করা হতো বলে অভিযোগ। একজন মহিলা বলেন, জ্বর সারছিল না বলে মাকে ওদের নার্সিংহোমে দু’দিন ভর্তি রেখেছিলাম। দু’দিনে ১৮ হাজার টাকা বিল করে। টাকা দিতে পারিনি বলে সোনার কানের দুল বন্ধক রাখতে বাধ্য করেছিল।
পুলিস তদন্ত নেমে জানতে পেরেছে, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা ডাক্তারি করছে। মুর্শিদাবাদ সহ বিভিন্ন জেলায় তাদের এজেন্ট ছড়ানো রয়েছে। এছাড়া বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরেও তাদের এজেন্টরা ঘোরাঘুরি করে। ওই দালালরা মগজধোলাই করে রোগীকে ওই নকল নার্সিংহোমে নিয়ে আসতো। একজন রোগী আনতে পারলেই দালালদের তারা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কমিশন দিত বলে স্থানীয়দের দাবি। নিজেদের একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। প্রয়োজন হলে তারা গ্রামে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে নকল নার্সিংহোমে রোগী নিয়ে আসতো।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, তিনতলা বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে তারা এই নকল নার্সিংহোম তৈরি করে রেখেছিল। সেখানে পাড়ার লোকজনদের যাওয়ার অধিকার ছিল না। প্রভাবশালীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকায় এলাকাবাসী তাদের সমঝে চলত। শুক্রবার দুপুরে ওই নকল নার্সিংহোমে গিয়ে দেখা হয়ে গেল, প্যারালাইসিস আক্রান্ত এক রোগী সেখানে ভর্তি রয়েছে। ওই রোগীর এক আত্মীয় বলেন, অনেক রোগী এখানে ভর্তি ছিল। বাবা-ছেলেই তাদের চিকিৎসা করেছে। তারা নিজেদেরকে ডাক্তার পরিচয় দেয়। সাইনবোর্ডে এই পরিচয় তারা লিখেও রেখেছে। যদিও তারা নিজেরাই স্বীকার করছে ডাক্তারি পড়েনি। তিন মাসের বিশেষ একটি কোর্স করেই ডাক্তার হওয়া যায় বলে তাদের দাবি।
বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, ওরা গরিব মানুষদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। যত বড় প্রভাবশালীর হাত মাথায় থাক না কেন ওদের শাস্তি পেতেই হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা সমস্ত নার্সিংহোম মালিকদের নিয়ে বৈঠক করব। কাগজপত্র ছাড়া যেসব নার্সিংহোম চলছে, সেগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ সরকার বলেন, বর্ধমানে দালালচক্র বন্ধ হওয়া দরকার। তারাই গরিব রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীপুরমাঠের অভিযুক্তদের একটি ওষুধের দোকানে রয়েছে। সেই দোকানে তারা রোগী দেখে। আর তিনতলা বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে রোগী ভর্তি করে রাখত। চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামোই সেখানে নেই। শুধু বাবা ও ছেলের বসার জন্য চেয়ার টেবিল রয়েছে। রোগীদের মেঝেতেই ফেলে রাখা হয়। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, নার্সিংহোম করার জন্য সি লাইসেন্স সহ একাধিক নথি দরকার। সেসব কিছুই তাদের নেই। বাড়িতে ভর্তি রেখে এভাবে কোনও রোগী দেখা যায় না।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।