ঝাড়গ্রামে দেড় শতকের বেশি হোলি ট্রিনিটি চার্চে বড়দিন পালিত হচ্ছে
বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: সিপাহী বিদ্রোহের সময় থেকে ঝাড়গ্রামের হোলি ট্রিনিটি চার্চে বড়দিন পালিত হচ্ছে। প্রথা ও রীতি মেনে এই ক্যাথলিক চার্চ এবারও বড়দিন পালিত হবে। উৎসব উপলক্ষ্যে আলো দিয়ে চার্চ সাজিয়ে তোলা হয়েছে। চব্বিশে ডিসেম্বর রাতে উৎসবের সূচনা হবে।
ঝাড়গ্রাম শহরে দক্ষিণ অংশে কলাবনির জঙ্গল লাগোয়া এলাকাতেই প্রাচীন এই চার্চটি রয়েছে। হোলি ট্রিনিটি চার্চের সংরক্ষিত নথি থেকে জানা জানা যায়, জেসুইট ধর্মাবলম্বীরা ১৮৫২ সালে ঝাড়গ্রামে এসেছিল। কলাবনি জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ছোট ঘর তৈরি করে সন্ন্যাসীরা থাকতেন। সেই সময়কার কুয়ো ও জেসুইট সন্ন্যাসীদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপ সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। ঝাড়গ্রাম রাজার কাছে জমি পেয়ে চার্চ বানানো হয়েছিল। ঝাড়গ্রামের এই চার্চ থেকেই জেসুইট সন্ন্যাসীরা একসময়ে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশে ধর্ম প্রচারের কাজে যেতেন। শিক্ষা ও সেবার কাজে স্থানীয় মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলেন। সেই কাজ আজও সমানভাবে চলছে। পুরনো সেই চার্চ আর নেই। নতুন চার্চ তৈরি হয়েছে। জেলার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা চার্চে নিয়মিত প্রার্থনা করতে আসেন। উৎসবে দলবেঁধে শামিল হন। চার্চ সংলগ্ন এলাকায় বাংলা ও ইংরেজি মিডিয়াম দুটি স্কুল তৈরি হয়েছে। নথিপত্র থেকে জানা যায়, বেলজিয়াম থেকে আসা জেসুইট সন্ন্যাসীরা কলকাতা থেকে প্রথমদিকে ঘোড়ার গাড়ি করে ঝাড়গ্রামে আসতেন। ফাদার লারমেট ছিলেন সেরকমই এক জেসুইট সন্ন্যাসী। তিনি বেলজিয়ামে ফিরে যাননি। এখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। চার্চে কাছেই তাঁর সমাধি রয়েছে। সেই সময় থেকে হোলি ট্রিনিটি চার্চ আজ সেবামূলক ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে চলেছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলা মাধ্যম স্কুল ১৯৯১ সালে শুরু হয়েছিল। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ২০১৮ সালে চালু হয়। ছাত্রীদের জন্য হস্টেলও রয়েছে। চার্চের ফাদার কুরিয়াস্কো জজ বলেন, প্রায় ১৭৫ বছর আগে এই চার্চ স্থাপিত হয়েছিল। এই চার্চের সঙ্গে বহু ইতিহাস জড়িয়ে আছে। শুরুর দিন থেকেই চার্চ নানা সেবামূলক কাজে জড়িত। চার্চের বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আছে। হস্টেলে থেকে আদাবাসী সম্প্রদায়ের ৯০ জন অল্পবয়সি মেয়ে পড়াশোনা করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এখানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল খোলা সম্ভব হয়। এই বছর বড়দিন উৎসবের ভার্চুয়াল উদ্বোধনও তিনি করেছেন। চার্চে জেলাশাসক থেকে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। যা আমাদের কাছে বড় পাওনা। বড়দিন পালনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। চব্বিশে ডিসেম্বরের রাতে ধর্মীয় প্রথা ও রীতি মেনে উৎসবের সূচনা হবে। পরের দিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিবারের মতোএবারও জেলার সব ধর্মের মানুষ এই উৎসবে শামিল হবেন। শহরের বাসিন্দা রণজিৎ দাস বলেন, পঁচিশে ডিসেম্বর হোলি ট্রিনিটি চার্চে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতিবার যাই। এবারও যাব। -নিজস্ব চিত্র