তমলুকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সভায় ধুন্ধুমার দুই গোষ্ঠীর নেতাদের, দল থেকে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি শুভঙ্করের
বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: রবিবার তমলুকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সামনেই দলের বর্ধিত সভায় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। কোলাঘাটে দলের দুই গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের তীব্র ঝামেলা থেকে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। দু’পক্ষের মারপিট আটকাতে মঞ্চ থেকে দৌড়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার নীচে নেমে আসেন। যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মাঝে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার মরিয়া চেষ্টা করেন। প্রায় ১০মিনিট ধরে দুই গোষ্ঠীর ঝামেলায় জেলার নানাপ্রান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মীরা হতবাক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির হুঁশিয়ারি, এরকম পরিস্থিতি তৈরি করলে দল থেকে বের করে দেব।
তমলুক শহরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে এদিন মঞ্চ বেঁধে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করবাবু ছাড়াও সহ সভাপতি লক্ষ্মণ শেঠ, জেলা সভাপতি অমিত করমহাপাত্র সহ অন্যান্য নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। জেলার সব ব্লক থেকে সভাপতি ও অন্যান্য নেতৃত্ব এসেছিলেন। প্রদেশ সভাপতিকে সংবর্ধনা জানানোর সময়ই গণ্ডগোল বেধে যায়। অসুস্থতার জন্য এদিন আসতে পারেননি জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি মহাদেব সেনগুপ্ত। কোলাঘাটের ওই নেতার ঘনিষ্ঠরা মঞ্চে উঠে শুভঙ্করবাবুকে সংবর্ধনা দেন। সেইসময় প্রদেশ সভাপতি নিজে মহাদেবের নাম উল্লেখ করে প্রশংসা করেন। কোলাঘাট ব্লকে সাগরবাড় পঞ্চায়েত কংগ্রেস জোটের দখলে রয়েছে বলেও প্রদেশ সভাপতি জানান। প্রদেশ সভাপতি মহাদেবের নামে প্রশংসা করতেই তুমুল ঝামেলা বাধে। মঞ্চের নীচে থাকা কোলাঘাটের কংগ্রেস নেতা সমীর হোসেন ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা রে রে করে চিৎকার শুরু করেন। মহাদেববাবুর অনুগামীরাও পাল্টা রুখে দাঁড়ান। দু’পক্ষ পরস্পরের দিকে তেড়ে যায়। তাতে মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। বেগতিক দেখে শুভঙ্করবাবু মঞ্চ থেকে দৌড়ে গিয়ে দু’পক্ষের মাঝে রুখে দাঁড়ান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু, সমীর হোসেন ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের মারমুখী পরিস্থিতি থেকে ঠান্ডা করতে হিমশিম খেতে হয়। কর্মীদের একাংশ মিডিয়া কর্মীদের দিকেও তেড়ে যান।
শুভঙ্করবাবু মারমুখী নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা নিজেদের মধ্যে এরকম করলে কী করে বিজেপি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন? আপনাদের অভিযোগ থাকতেই পারে। পার্টিতে আলোচনা হবে। প্রদেশ দপ্তরে অভিযোগ বক্স করে দিয়েছি। সেখানে গিয়ে ফেলে আসবেন। এটা মস্তানি করার জায়গা নয়। পার্টি আলোচনার জায়গা। দলের ভিতর এভাবে ঝামেলা করলে তৃণমূল, বিজেপির বিরুদ্ধে কীভাবে লড়বেন? ক’টা পঞ্চায়েতে জিতছেন? তাহলে কীসের নেতা? এমনিতেই আমাদের অবস্থা খারাপ। ঘরের ভিতর দরজা বন্ধ করে করতে পারতেন। আজ থেকে শৃঙ্খলা মানুন। এভাবে ঝামেলা করলে পার্টি থেকে বের করে দেব।
ঝামেলায় জড়ানো কোলাঘাটের কংগ্রেস নেতা সমীর হোসেন বলেন, আমি অনেক লড়াই করে দলে নিজের একটা জায়গা করেছি। তাতেই মহাদেব ও তাঁর লোকজন ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে প্রতিনিয়ত সংঘাতে জড়াচ্ছেন। আমাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হচ্ছে। দলের মধ্যে পাল্টা লবি করছেন। এনিয়ে ক্ষোভের বহিংপ্রকাশ ঘটেছে। যদিও জেলা কংগ্রেস সভাপতি মানস কর মহাপাত্র বলেন, সমীর হোসেন এর আগে দলবিরোধী কাজ করায় পার্টিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। রবিবারও প্রদেশ সভাপতির সামনে তিনি যা করেছেন সেটা চূড়ান্ত অন্যায়। -নিজস্ব চিত্র