সৌর বিদ্যুৎবাহী ফেন্সিংয়ে হাতির উপদ্রব কমেছে, বনদপ্তরের দাওয়াইয়ে খুশি উত্তর ও দক্ষিণ পানিয়ালগুড়ির ৭০০ কৃষক পরিবার
বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: চেকো থেকে কালকূট নদী পর্যন্ত বক্সার জঙ্গলের ধারে ৪ কিমি এলাকায় বনদপ্তরের সৌর বিদ্যুৎবাহী ঝুলন্ত ফেন্সিং দেওয়ার কাজ শেষ। বর্তমানে সেই ফেন্সিংয়ে বাধা পেয়ে হাতির দল ফের জঙ্গলে ঢুকে যাচ্ছে। লোকালয়ে ঢোকার আর সাহস পাচ্ছে না হাতির দল। বনদপ্তরের এই দাওয়াইয়ে মুখে হাসি ফুটেছে আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের মাঝেরডাবরী গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর ও দক্ষিণ পানিয়ালগুড়ির প্রায় ৭০০ কৃষক পরিবারের।
হাতি আসতে না পারায় প্রায় দেড় শতক পর ওই দু’টি গ্রামের কৃষকরা এবার আমন ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। এবার বোরো ধান লাগাতে বীজতলা তৈরির কাজও শুরু করে দিয়েছেন কৃষকরা। হাতির অত্যাচার বন্ধ হওয়ায় তিন ফসলি দু’টি গ্রামে শীতকালীন সব্জি চাষও এবার ব্যাপক হয়েছে।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের এক কর্তা বলেন, উত্তর ও দক্ষিণ পানিয়ালগুড়িতে সৌর বিদ্যুৎবাহী ঝুলন্ত ফেন্সিং দেওয়ার কাজ শেষ। এখন ওই দু’টি গ্রামে হাতির দল আর ঢুকছে না। কৃষকরা এখন নির্বিঘ্নেই চাষবাস করছেন।
উল্লেখ্য, হাতির উপদ্রব থেকে ফসল বাঁচাতে মাঝেরডাবরীর পানবাড়ি গ্রামেও এই ধরনের ফেন্সিং দেওয়া হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত পানবাড়িতে হাতি ঢোকার একটি ঘটনাও ঘটেনি। পানবাড়ির সুফল দেখার পর উত্তর ও দক্ষিণ পানিয়ালগুড়িতেও স্থানীয় জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি (জেএফএমসি) ও বনদপ্তরের উদ্যোগে এই ফেন্সিং দেওয়া হয়। ফেন্সিং দেওয়ার কাজ শেষ হতেই এই দু’টি গ্রামেও ফল মিলতে শুরু করেছে। হাতির দল আর আসতে পারছে না এই গ্রামগুলিতে। ৪ কিমি এই ঝুলন্ত ফেন্সিং তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা। স্থানীয় জেএফএমসি থেকেই এই অর্থ দেওয়া হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ পানিয়ালগুড়ি জেএফএমসি’র সভাপতি সুশীল বর্মন বলেন, বক্সার হাতির অত্যাচারে দেড় দশক ধরে আমরা জমির ফসল ঘরে তুলতে পারতাম না। হাতির জন্য চাষবাসই করা যেত না। পানবাড়িতে এই ফেন্সিংয়ের সাফল্য দেখে আমরাও বনদপ্তরের সহযোগিতায় ফেন্সিং লাগাই দুই গ্রামে। তার সুফল মিলেছে। দেড় দশক পর এই প্রথম আমরা আমন ধান জমি থেকে তুলতে পেরেছি।
এই জেএফএমসিতে ৭০০টি কৃষক পরিবার আছে। এখন নিশ্চিন্তে তাঁরা নিজেদের জমিতে চাষবাস করছেন। দীর্ঘদিনের হাতির উপদ্রবের সমস্যা মিটে যাওয়ায় দু’টি গ্রামের কুমোরপাড়া, ঘোষপাড়া, বাংলাপাড়া ও সিকিয়াঝোরার কৃষকরা নির্বিঘ্নে চাষ করছেন।
বক্সার পূর্ব দমনপুরের রেঞ্জার সুজিতকুমার বর্মা বলেন, সৌর বিদ্যুৎবাহী ঝুলন্ত ফেন্সিংয়ে হাতির মৃদু শক লাগে। এই শকে হাতি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মৃদু ধাক্কা খেয়ে হাতি ফের জঙ্গলে ঢুকে যাবে।