রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে মা উড়ালপুল থেকে নীচে, সাতসকালেই শহরে গতির বলি দুই
বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ফের সেই মা ফ্লাইওভার! দ্রুত গতিতে ছুটে আসা বাইকের ধাক্কা সাইড রেলিংয়ে। পাঁচতলা সমান উড়ালপুল থেকে ছিটকে নীচে পড়লেন চালক ও আরোহী। মৃত্যু হল দু’জনেরই।
রবিবার সকালে সায়েন্স সিটির কাছে মা ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনাটি ঘটে। চালকের মাথায় হেলমেট থাকলেও আরোহীর মাথা খালি ছিল। পুলিস জানিয়েছে, মৃতদের নাম অনীশ রানা (১৮) এবং দানিশ আলম (১৯)। তাঁরা দু’জনই বউবাজারের ফিয়ার্স লেনের বাসিন্দা। ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টার নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ফ্লাইওভারের উপর থেকে বাইকটি বাজেয়াপ্ত করেছে প্রগতি ময়দান থানার পুলিস। এদিন দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজকুমার ভার্মা। ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও এবং অমিত কুমার সাউকে কিছু পরামর্শও দেন তিনি।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অনীশ ও দানিশের বন্ধুত্ব ছোটবেলা থেকে। বাইকটি ছিল দানিশের দাদার। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে দুই বন্ধু ওই বাইক নিয়ে ময়দান চত্বরে মর্নিংওয়াকে যেতেন। কিন্তু রবিবার তাঁদের অন্য পরিকল্পনা ছিল। এদিন বাইক নিয়ে তাঁরা নিউটাউন চলে যান। ইকোপার্কে কিছুক্ষণ সময় কাটান। ফেরার পথে চিংড়িঘাটা হয়ে মা ফ্লাইওভার ধরেন তাঁরা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে পুলিস জানতে পারে, দানিশ বাইক চালাচ্ছিলেন। মেট্রোপলিটন ক্রসিং পার করে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সেটি ফ্লাইওভারে ওঠে। বাঁ দিকের লেন ঘেঁষে যাচ্ছিল লাল রঙের আর-১৫ বাইকটি। সায়েন্স সিটির কাছে ডানদিকে বাঁক নিতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারায়।
অতিরিক্ত গতির কারণেই দানিশ বাইকের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি বলে পুলিসের প্রাথমিক অনুমান। চালক এবং আরোহী উড়ালপুলের নীচে বিশ্ববাংলা সরণির উপর গিয়ে পড়েন। রক্তে ভেসে যায় রাস্তার ওই অংশ। সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ডিউটি করছিলেন তিলজলা ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট। দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে তিনি ট্রাফিক গার্ড ও প্রগতি ময়দান থানায় খবর পাঠান। পরমা আইল্যান্ডে পুলিসের ‘কর্মা’ অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত ছিল। দ্রুত তাঁদের ওই অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তবে তার আগেই নিথর হয়ে গিয়েছে দু’টি তাজা প্রাণ। দানিশের দাদা বলছিলেন, ‘মর্নিংওয়াকে যাচ্ছি বলে দু’জনে বেরিয়েছিল। ওদের তো মা ফ্লাইওভারে ওঠার কথাই নয়।’ উল্লেখ্য, মাস চারেক আগে বেলেঘাটা যাওয়ার পথে এই মা উড়ালপুলের উল্টোদিকের লেনে একইভাবে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক যুবকের। মা ফ্লাইওভারে এভাবে একের পর এক দুর্ঘটনায় গতি-দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সিপি বলেন, ‘গতি খুব বেশি থাকলে ফ্লাইওভারের বাঁকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। ওই বাইকের গতি বেশি ছিল।’