• পৌষ পার্বণে ঢেঁকিতে চাল ভানার প্রস্তুতি, এলাকায় সম্প্রীতির ছবি
    বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কল্যাণী: ‘ঢেঁকি পেতে  ধান ভানে বুড়ি/খোলা পেতে  ভাজে খই মুড়ি…।’ রবীন্দ্রনাথ ঢেঁকি দেখেছিলেন এবং লেখায় তুলেও ধরেছিলেন গ্রামবাংলার চিরপরিচিত এই ছবি। তাঁর আমলে ঢেঁকিতে ধান ভানা হতোই। তার পরেও হয়েছে। কিন্তু এখন মেশিনের দাপটে ঢেঁকি হারিয়েই গিয়েছে প্রায়। তবে এখনও রবীন্দ্রনাথের সেই বুড়ির মতো সবাই বলেন, ঢেঁকিতে ধান ভানা না হলে নাকি পিঠেপুলির স্বাদ খোলতাই হয় না। ফলে শিমুরালিতে বাংলার ঐতিহ্য মেনে পৌষ পার্বণের সময় ঢেঁকিতে পা পড়ে মহিলাদের। পিঠেপুলি তৈরি করেন হিন্দু-মুসলমান মহিলারা। 


    সোনালি ফসল ঘরে উঠলে বাংলার বধূরা ঢেঁকি দিয়ে ধান ভানতেন। এখন আধুনিক যুগ। যন্ত্র এসেছে গ্রামে। ধান, চাল, ডাল, মসলা সবই লহমায় গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। প্যাকেটে ভরে দোকানেও বিকোচ্ছে। ফলে ঘরে ধানচাল গুঁড়ো করার দিন গিয়েছে। বর্তমানে গোটা একটি গ্রাম ঘুরলে হয়ত দু-একটি বাড়িতে মাত্র কাঠের ঢেঁকির দেখা মিলবে। তবে ব্যতিক্রমী ছবিও দেখা যায়। চাকদহ ব্লকের চাঁন্দুরিয়া এক নম্বর পঞ্চায়েতের মলিচাগর গ্রামে নিয়ম মেনে ঢেঁকিতে চাল ভেনে পিঠেপুলি তৈরি করেন মহিলারা। নুর, রেবেকা, তামিসা, সীমার সঙ্গে পা মেলান আলো, শিপ্রা, বীথিকারা। 


    পৌষ সংক্রান্তি চলে এল বলে। এসময় হিন্দু-মুসলমান সবাই বাউনি বা পিঠেপুলি খায়। যদিও এ গ্রামে বৃদ্ধা নুর বিবির বাড়িতেই একমাত্র ঢেঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই মাস পিঠেপুলি খেয়ে উৎসব করার মাস। তেমনই হিন্দুদের হয় বাউনি উৎসব। আমার বাড়িতে ঢেঁকি রয়েছে বলে গ্রামের সব মহিলা আমার বাড়ি আসে চাল ভানতে। অনেকে বলেন সম্প্রীতি রক্ষা করছি আমরা। এভাবে সুসম্পর্ক বজায় থাকে আমাদের।’ এ গ্রামের আলো মণ্ডল বলেন, ‘যন্ত্রে চাল গুঁড়ো করলে পিঠের স্বাদ ভালো হয় না। তাই গ্রামের সকলে একসঙ্গে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করতে যাই নুর ঠাকুমার বাড়ি। এসময় খুব আনন্দ হয়। সবার সঙ্গে সবার সম্পর্ক আরও ভালোভাবে গড়ে ওঠে।’ - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)