এই সময়: ‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই..!’ কবীর সুমনের জনপ্রিয় এই গানকে বোধহয় সামান্য বদলে এখন বলাই যায় — ‘এক কাপ চা, আমি তোমাকেই চাই!’
কারণ, এমনিতেই পানীয় হিসেবে সারা দুনিয়ায় বিপুল জনপ্রিয় চায়ের মুকুটে সদ্য যোগ হয়েছে এমন একটি পালক, যা এককথায় বেনজির। প্রচুর পরিমাণে নানা রকম অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে বলে চা-কে এ বার ‘স্বাস্থ্যকর পানীয়’ আখ্যা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা — ইউনাইটেড স্টেটস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইউএসএফডিএ)। ফলে উচ্ছ্বাসের বান ডেকেছে চা শিল্পে। উৎফুল্ল ভারতীয় চা ব্যবসায়ীদের সংগঠনও।
অবশ্য এই খবরে খুশি হবেন না, এমন মানুষ বিরল। বিশেষত, এই বঙ্গে। দিনে বেশ কয়েক কাপ র’ বা লাল লিকার চা খাওয়া বাঙালির বহু পুরোনো অভ্যাস। চলে চায়ে পে চর্চা, চায়ে পে আড্ডা, ওঠে চায়ের পেয়ালায় তুফান। ইদানীং স্বাস্থ্য সচেতন বঙ্গসন্তানদের অনেকের জীবনে আবার ইন-থিং গ্রিন টি-ও।
শুধু বাঙালি কেন, সারা দুনিয়াতেই, বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে চায়ের চেয়ে জনপ্রিয় পানীয় আর নেই। চিনি-দুধ ছাড়া এই সব ধরনের চা-কেই (বৈজ্ঞানিক নাম, ক্যামেলিয়া সিনেনসিস) বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয়ের যে তালিকা তৈরি করেছে ইউএসএফডিএ, তাতে এই প্রথম বার স্থান পেয়েছে চা।
ইউএসএ টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পিটার এফ গোগি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চা শিল্পের জন্য এর চেয়ে ভালো খবর আর হতে পারে না। কারণ, চা-কে এখন স্বাস্থ্যের মোড়কেও বিপণন করা যাবে। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন (আইটিএ) এবং নর্থ-ইস্টার্ন টি অ্যাসোসিয়েশন (নেটা)-এর উপদেষ্টা টি বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ভাইস-চেয়ারম্যান বিদ্যানন্দ বরকাকোটির গলাতেও এক সুর।
তিনি বলেন, ‘ইউএসএফডিএ-র এই স্বীকৃতিতে আমরা দারুণ খুশি। চা খাওয়ায় যে শরীরের উপকার হয়, তা অনেক দিন ধরেই নানা গবেষণায় প্রমাণিত। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমরা আবেদন করব, যাতে চা-কে হেলদি লাইফ স্টাইল এবং ওয়েলনেস বেভারেজ হিসেবে প্রচার করা হয়।’
নেটা-র তরফেই ইউএসএফডিএ-র এই স্বীকৃতির খবরটি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছিল। সেখানে এ কথাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয় যে, ক্যামেলিয়া সিনেনসিসের চা-কেই ইউএসএফডিএ স্বাস্থ্যকর স্বীকৃতি দিয়েছে।
আর ক্যামোমাইল ফুল, পিপারমিন্ট, আদা, জবা ফুল, ল্যাভেন্ডার, বাটারফ্লাই পি ফ্লাওয়ার এবং নানা রকম মশলা ও গরম মশলা সহযোগে যে ‘হার্বাল টি’ তৈরি হয়, এই স্বীকৃতি আদৌ তাদেরকে দেওয়া হয়নি ইউএসএফডিএ-র তরফে। কারণ, ইউএসএফডিএ বিবৃতিতে জানিয়েছে, হার্বাল টি-এর গুণাগুণ ও উপকারিতার পক্ষে এখনও তাদের কাছে তেমন প্রামাণ্য তথ্য নেই। তাই আপাতত স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে ক্যামেলিয়া সিনেনসিস-কেই।
কেন ক্যামেলিয়া সিনেনসিস-কে এত উপকারী বলা হচ্ছে?
ক্যান্সার শল্য-চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘চায়ের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপার্টি চমৎকার। বিশেষ করে গ্রিন টি-র। এমনকী, ক্যান্সার প্রতিরোধেও সক্ষম সেই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।’ কোন কোন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এমন প্রাণদায়ী, তা ব্যাখ্যা করেছেন এন্ডোক্রিনোলজি বিশেষজ্ঞ সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
তাঁর কথায়, ‘ক্যামেলিয়া সিনেনসিস-এর মধ্যে থাকা ক্যাটেচিন আর এপিগ্যালো-ক্যাটেচিন গ্যালেট রাসায়নিক দু’টি খুবই শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। চায়ের লিকার তৈরির সময়েই তার মধ্যে থাকা এই রাসায়নিক দু’টি জারিত হয়ে থিয়াফ্ল্যাভিন রাসায়নিকের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সেটিও খুব ভালো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। চায়ের মধ্যে থাকা থিয়াক্সানথিন নামের আর একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও দারুণ উপকারী।’
পুষ্টিবিদ অরিজিৎ দে চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে গুণগান করার পরেও চা-পানের পরিমাণ নিয়ে সতর্ক করছেন। তিনি বলেন, ‘চায়ের উপকারিতা হার্টের ক্ষেত্রেও পরীক্ষিত। ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণেও পটু চা। ক্যান্সার প্রতিরোধের পাশাপাশি পরিপাক তন্ত্র এবং ত্বকেও চায়ের সুফল বিজ্ঞানে স্বীকৃত। তবে হ্যাঁ, চিনি-দুধ ছাড়া লিকার চা। সে ব্ল্যাক টি হোক বা গ্রিন টি।’ তিনি সাবধান করছেন, দিনে ব্ল্যাক টি ১৫০ মিলিলিটারের চার কাপ আর গ্রিন টি তিন কাপের বেশি না-খাওয়াই ভালো।