এই সময়,আলিপুরদুয়ার: পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমণিতে হোটেল ভাঙা নিয়ে পিছু হটেছিল জেলা প্রশাসন। একই অবস্থা আলিপুরদুয়ারের বনকর্তাদের। রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী ও সান্তালাবাড়ি এলাকায় সব ধরনের বাণিজ্যিক কাজ বন্ধ করে দিতে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফে ফ্লেক্স টানিয়ে নোটিস জারি করা হয়েছিল কয়েক দিন আগে। কোনও এক অদৃশ্য কারণে শনিবার রাতের মধ্যেই খুলে ফেলা হয়েছে।
এই ফ্লেক্সগুলি কে বা কারা খুলল, তা স্পষ্ট নয়। তাহলে কি ঘরে–বাইরে চাপে পড়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের মধ্যে থাকা হোটেল, রিসর্ট ও হোম–স্টে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে হচ্ছে তাদেরও। বনকর্তারাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চ পরিবেশ আদালতের জারি করা হোটেল–রিসর্ট বন্ধের নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ বৃদ্ধি না করায় তড়িঘড়ি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধের নোটিস জারি করে বন দপ্তর।
তাদের এই অতি সক্রিয়তাকে রাজ্য সরকার যে ভালো ভাবে নেয়নি, তার ইঙ্গিত মিলেছে। বন দপ্তরের কালো তালিকায় থাকা পর্যটন ব্যবসায়ীদের আইনি সহায়তারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
রবিবার বক্সার স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে একুশ মাইলে একটি ম্যারাথন বৈঠকের পরে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিকবরাইক বলেন, ‘আমাদের সরকার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অহেতুক উচ্ছেদের বিরোধী। তাই আমরা বক্সার মানুষদের পাশে আছি। তবে মহামান্য আদালতের রায়ের উপরে আমাদের কোনও হাত নেই। আজ, সোমবার উচ্ছেদের মামলায় যদি স্থগিতাদেশ না মেলে তবে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে যাব। বিপদে পড়া মানুষদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দেব।’
সাংসদের ওই আশ্বাসের পরে অনেকটাই ভরসা পেয়েছেন বক্সার বাসিন্দারা। জিপসি চালক কুরবান খান বলেন, ‘সাংসদ যে ভাবে আমাদের সমস্যার কথা শুনে আইনি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন, তাতে আমরা ভরসা পেয়েছি। তবে সোমবারের হাইকোর্টের শুনানির দিকে আমাদের সকলের নজর থাকবে।’
যদিও বক্সার বিভিন্ন হোম–স্টে, রিসর্ট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে বন দপ্তরের পক্ষ থেকে যে নোটিস ধরানো হয়েছিল সেগুলি রবিবার পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয়নি। এই মুহূর্তে বক্সার অন্দরে থাকা হোটেল, হোম–স্টে ও রিসর্টগুলিতে পর্যটকদের রাত্রিবাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পর্যটনের ভরা মরশুমে প্রায় প্রতিদিনই বক্সায় বেড়াতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা।
ফলে প্রতিদিনই পর্যটন ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ লাফিয়ে বাড়ছে। জানা গিয়েছে, বেশ কিছু রিসর্ট ও হোম–স্টের মালিকরা আগাম বুকিংয়ের টাকা খরচ করে ফেলেছেন। এখন পর্যটকদের সেই টাকা ফেরত দিতে গিয়ে অনেকে বাজার থেকে চড়া সুদে ধার নিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে হোটেল–রিসর্ট বন্ধের ওই নোটিস ইস্যুর পর থেকেই সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনাধিকারিকরা৷ পরিস্থিতি জানতে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষের একাধিক বনকর্তাকে রবিবার ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।