• পাতে পোলাও–মুরগি, বনভোজনের আনন্দে মশগুল দাদুর পাঠশালার নাতি–নাতনিরা
    এই সময় | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, মালদা: নাম তার দাদুর উন্মুক্ত পাঠশালা। কারণ যাঁরা শিক্ষক, তাঁরা সবাই পক্ককেশ, অবসরপ্রাপ্ত। পড়াশোনা চলে খোলা আকাশের নীচে। আর পড়ুয়ারা সবাই নাতি–নাতনির বয়সি। এই আজব পাঠশালার পড়ুয়ারা বনভোজনের আনন্দে মাতল। গোটা বছর ডাল–ভাতের বাইরে যাদের আর কিছুই জোটে না, তাদের পাতে পড়ল বাসন্তী পোলাও, সাদা ভাত, মুগের ডাল, বেগুনি, স্যালাড, মিক্সড পনির, দেশি মুরগির ঝোল, দই, রসগোল্লা।

    রবিবার সারদা মায়ের জন্মতিথিতে কব্জি ডুবিয়ে খেল ইঁটভাটা, বিড়ি শ্রমিক এবং দিনমজুরের পরিবারের প্রায় ২০০ কচিকাঁচা। মালদার দাদুর উন্মুক্ত পাঠশালার দুঃস্থ পরিবারের সন্তানরা এদিন ইংরেজবাজার শহরের ঘোড়াপীর সংলগ্ন এলাকায় পরিত্যক্ত বিমানবন্দরে চড়ুইভাতিতে মেতে ওঠে।

    করোনাকালের সময় থেকে ইংরেজবাজারের বাগবাড়ি, ঘোড়াপীর, কুলিপাড়ার দরিদ্র শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষাদানে গড়ে উঠেছিল দাদুর উন্মুক্ত পাঠশালা। কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সরকারি কর্মীরা এইসব দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে এই পাঠশালাটি গড়ে তোলেন। প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল সাতটা থেকে ন’টা পর্যন্ত পরিত্যক্ত বিমানবন্দরের ফাঁকা মাঠে বিনামূল্যে এই শিক্ষাদানের পর্ব চলে।

    রোজকার একঘেয়েমি কাটাতে পৌষ মাসের প্রথম রবিবার বনভোজনের আয়োজন করা হয়। এতদিন পিকনিক সম্পর্কে কোনও ধারনাই ছিল না খুদেদের। সেটা যে এত সুন্দর, আনন্দের তা এই প্রথম স্বাদ পেল শ্রমিক পরিবারের সন্তানরা। মেনুতে যা ছিল সবই চেটেপুটে খেল দাদুর পাঠশালার পড়ুয়ারা। এদিনের বনভোজনে হাজির হয়েছিলেন ইংরেজবাজার পুরসভার তৃণমূলের কাউন্সিলার বাবলা সরকার।

    সবার সঙ্গে তিনিও পিকনিকের আনন্দে মেতে ওঠেন। কাউন্সিলার বলেন, ‘চার বছর ধরে দাদুর উন্মুক্ত পাঠশালায় দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়ানো হয়। পাঠশালার কর্তারা পড়ানোর পাশাপাশি এত সুন্দর বনভোজনের আয়োজন করেছে যে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’

    দাদুর উন্মুক্ত পাঠশালার পরিচালক তথা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘এই বিমানবন্দর সংলগ্ন আশেপাশে অসংখ্য দিনমজুরের পরিবার রয়েছে। সেই সব পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য এই পাঠশালা চালু করা হয়েছে। এদিন সারদা মায়ের জন্মতিথি উপলক্ষে এইসব দরিদ্র পরিবারের শিশুদের নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করা হয়। সেখানে খাওয়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, গান, বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নেয় ওরা।’

  • Link to this news (এই সময়)