এই সময়, শিলিগুড়ি: রোগীকে স্ট্রেচারে শুইয়ে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের লোকেরা। শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও, এটাই প্রতিদিনের চিত্র উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। এমআরআই, এক্সরে অথবা ইউএসজি করাতে মেডিক্যাল কলেজের গ্রুপ ডি স্টাফকে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ। পথ দুর্ঘটনায় কেউ জখম হলে রক্তাক্ত রোগীকে স্ট্রেচারে তোলার ক্ষেত্রেও ভরসা পরিবারের লোকেরা।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম হাসপাতালে। শতাধিক চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ‘সেলফ সার্ভিস’ই এই হাসপাতালে আসা রোগীদের জন্য বিধান। কর্তৃপক্ষের অন্তত এই ব্যাপারে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। গত মঙ্গলবারই এমন ঘটনা ঘটেছে বিধাননগরের মাইকেল ওরাঁওয়ের পরিবারের।
সকালে পরিবারের লোকেরা ওয়ার্ডে ঢুকে জানতে পারেন, রোগীর এমআরআই করাতে হবে। চিকিৎসকের তেমনই নির্দেশ। কিন্তু নিয়ে যাবে কে? নার্সের সাফ জবাব, আমাদের এখানে জিডি স্টাফ নেই। আপনারাই নিয়ে যান। মাইকেলের কাকা রবিন বলেন, ‘কী বলব! গরজ তো আমাদের। তাই নিজেরাই কষ্ট করে স্ট্রেচারে শুইয়ে নিয়ে গেলাম। কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।’
গয়েরকাটা থেকে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন রুবিনা বিবি। রক্ত পরীক্ষা করানোর জন্য তাঁকে প্যাথোলজিতে যেতে বলা হয়। হুইল চেয়ারে বসিয়ে ছেলেকে সেখানে নিয়ে যেতে হয়। মাস খানেক আগের কথা। কেমোথেরাপি দিয়ে মা রুকসানা বিবিকে নিয়ে এসেছিলেন চোপড়ার বাসিন্দা সইদুল।
স্ট্রেচার কিংবা হুইল চেয়ার, কোনওটাই তিনি পাননি। বাধ্য হয়ে পিঠে বসিয়ে মাকে নিয়ে যান হাসপাতালের একেবারে শেষ প্রান্তে অঙ্কোলজি বিভাগে। ক্ষুব্ধ সইদুল বলেন, ‘গরজ তো আমাদের। আমাদের রোগী। আমাদেরই নিয়ে যেতে হবে। বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাচ্ছি, এটা কী কম কথা!’
সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। প্রায় সাতশো একরের উপরে বিশাল জমিতে গড়ে উঠেছে কলেজ ও হাসপাতাল। পনেরোটির উপরে বিভাগ। ইনডোর, আউটডোর, কলেজ, নার্সিং কলেজ, ফরেন্সিক মেডিসিন মিলিয়ে এক বিশাল ব্যাপার। এর বাইরে সুপার স্পেশালিটি। এত বড় আয়োজন সামলাতে যত গ্রুপ ডি স্টাফ দরকার সেটা নেই। ফলে রোগী সামলাতে গিয়ে প্রতিদিন হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তার পরেও রয়েছে কিছু কর্মীর ফাঁকিবাজি। এই ব্যাপারে হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিকের বক্তব্য জানা যায়নি। তিনি ফোন তোলেননি।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন ডিন তথা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীদের সাধ্যমতো সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু এত বড় হাসপাতাল সামলানো সহজ কথা নয়। উর্ধ্বতন কর্তাদের সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। সকলে মিলে একটা সুরাহা করার চেষ্টা চলছে।’