নতুন করে আবার পাকিস্তানি জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের নদী–পথ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন বলে ভারতের গোয়েন্দা কর্তাদের দাবি।
নদী পেরিয়ে খুব সহজেই বাংলাদেশ থেকে ঢুকে আসা যায় পশ্চিমবঙ্গে। সুন্দরবনের বিশাল এলাকা–জুড়ে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে ছোট ছোট নদী, খাঁড়ি। এমন বহু খাঁড়ি–নদী হয়ে বাংলাদেশ থেকে ঢুকে আসা যায় ভারতে। জলঙ্গি, ইছামতি–সহ একাধিক নদীতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ–এর নজরদারি থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই মনে করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
সুন্দরবন লাগোয়া কালিন্দি, রায়মঙ্গল, হাড়িয়াভাঙা নদী পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে সহজেই যে কেউ ভারতে ঢুকে আসতে পারে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তাঁরা বলছেন, প্রায় বছর কুড়ি আগে এইসব নদী–পথই ব্যবহার করে ভারতে ঢুকত জম্মু–কাশ্মীরের জঙ্গিরা। পরবর্তীতে বাংলাদেশের মাটিতেই কড়াকড়ি শুরু হতে তা অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার ঢুকতে শুরু করেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থেকে শনিবার রাতেই এমনই এক সন্দেহভাজন কাশ্মীরি জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে জম্মু–কাশ্মীরের পুলিশ। সে নাকি লস্কর–ই–তৈবা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। এক গোয়েন্দা কর্তার দাবি — ‘এই সংখ্যা আগামী দিনে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সখ্যতা বেড়েছে। যে জঙ্গিরা পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে সরাসরি ভারতকে ঢুকতে পারছিল না, তারা এতদিন নেপাল হয়ে ঢোকার চেষ্টা করছিল। এখন তারা বাংলাদেশে ঢুকে নদী পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে।’ এরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরপ্রদেশ হয়ে জম্মু যাচ্ছে বলেও দাবি গোয়েন্দা কর্তার।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ইছামতি পেয়ে ভারতেরই পানিতর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জল–সীমান্ত। এই সীমান্তেই রয়েছে চারটি নদী — ইছামতি, কালিন্দি, রায়মঙ্গল ও শেষে হাড়িয়াভাঙা। সেখানে জলের উপরে কোনও চিহ্নিত সীমান্তরেখা নেই। সেই জল সীমানায় পাহারা দেয় বিএসএফ।’
গোয়েন্দা কর্তাদের দাবি, এই বিস্তৃত এলাকা দিয়ে রাতের অন্ধকারে ভারতে ঢুকে আসা খুবই সহজ। প্রশাসনিক ওই কর্তা জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্তে উত্তর থেকে দক্ষিণে মোট ৭২টি ছোট–বড় নদী রয়েছে। এত নদীর প্রতিটি ইঞ্চি পাহারা দেওয়া কার্যত অসম্ভব।
গত কয়েক মাসে কাশ্মীরকে অশান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছে সীমান্তের ও পারের মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী। সম্প্রতি জম্মু–কাশ্মীরে নির্বাচনের সময়ে জঙ্গিদের সঙ্গে পর পর গুলির লড়াই চলেছে সেনাবাহিনীর। নির্বাচনের আগে থেকেই কাশ্মীর সীমান্ত কার্যত সিল করে দেওয়ার পরে জম্মুর সীমান্ত ব্যবহার করতে শুরু করেছিল তারা। গোয়েন্দাদের কথায়, জম্মুর রাজৌরি ও পুঞ্চ দিয়ে ভারতে ঢোকার রাস্তাও এখন বন্ধ। তারপর থেকে নেপালের সীমান্তই ছিল ভারতে ঢোকার ছিল একমাত্র উপায়। কিছু মাস আগে পর্যন্ত জঙ্গিরা বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে পারছিল না।
গোয়েন্দাদের দাবি আনুযায়ী, অগস্টের আগে বাংলাদেশের গোয়েন্দা দপ্তরের সক্রিয়তার কারণে পাকিস্তানি জঙ্গিরা সে দেশে গিয়ে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছিল না। ভারতীয় গোয়েন্দাদের অভিযোগ, পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জঙ্গিরা এখন সহজেই উড়ান ধরে চলে আসছে বাংলাদেশে। তারপরে রাতের অন্ধকারে নদী পেরিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে ভারতে।
এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘আমাদের কাছে যা খবর, এরা সকলেই খালি হাতে ঢুকছে। তাদের অস্ত্র সরবরাহ করার লোক আলাদা।’ এই প্রসঙ্গেই, বহু বছর পরে সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে দু’টি পণ্য জাহাজ ঢোকার কথাও তুলে এনেছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, ‘এ ভাবে অস্ত্রও তো পাঠানো হতে পারে। সেই অস্ত্র পরে হয়তো বাংলাদেশে থেকে ভারতে ঢুকে আসবে।’
ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, মুর্শিদাবাদের সীমান্তে সুতি, লালগোলা, রানিনগরও ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। তবে প্রধানত নদী–ঘেরা সুন্দরবনের বিস্তৃত এলাকাই তাদের ‘সেফ প্যাসেজ’। কোস্ট গার্ড তো পাহারা দেয়? গোয়েন্দা কর্তার কথায়, ‘এত বিশাল এলাকায় প্রচুর ফাঁক–ফোকর থাকে। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে সহজেই নদী পেরিয়ে ঢুকে আসা যায়। সম্প্রতি সুন্দরবন এলাকায় চারটে বাংলাদেশি ভেসেল থেকে ৮৪ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। সকলেই বলছেন, মৎস্যজীবী! হতে তো পারে এদের দলেই ভিড়ে রয়েছে জঙ্গিরা।’