• বন্ধ হলো ৯৮ বছরের পুরোনো সেই বাসরুট
    এই সময় | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: নার্ভাস নাইন্টিজ়। সেঞ্চুরির দরজায় দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত সেলিব্রেশন করতে পারেননি, এমন ব্যাটারের তালিকায় রয়েছেন প্রায় সব খ্যাতনামা ক্রিকেটারই। দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হয়েও শেষ পর্যন্ত ১০০ বছরে পা দিতে পারেননি এমন অনেক মানুষও আছেন। বাসরুটও। ১৯২৬ সালে হুগলির শ্রীরামপুর থেকে কলকাতার বাগবাজার পর্যন্ত লম্বা রুটে প্রথম পরিষেবা চালু হয়েছিল ৩ নম্বর রুটের। ১০০ বছর পূর্ণ হতে যখন আর মাত্র দু’বছর বাকি, তখনই বন্ধ হয়ে গেল এই রুটে চলা শেষ বাসটির চাকা।

    বাসের বয়স ১৫ হলে তা আর রাস্তায় নামানো যাবে না—প্রশাসনের এমন নির্দেশের পর বন্ধ হলো ৩ নম্বর রুটের সবেধন নীলমণি বাসটি। গত কয়েক বছর ধরেই অবশ্য এই রুটে বাসের সংখ্যা নিয়মিত ভাবে কমতে শুরু করেছিল। রুটে যাঁদের বাস চলত, সেই বাসের মালিকরা নতুন করে আর এই রুটে বাস নামিয়ে ব্যবসা চালাতে রাজি হননি। সে জন্যই কয়েক বছর আগেও যাত্রীদের যে বাস পাওয়ার জন্য মাত্র তিন–চার মিনিটের বেশি অপেক্ষা করতে হতো না, পরে সেই বাসের দেখা পাওয়াই কঠিন হতো।

    কলকাতা, শহরতলি এবং ও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার বাস পরিষেবা নিয়ে কাজ করে কলকাতা বাস–ও–পিডিয়া নামে একটি সংগঠন। প্রধানত বাসপ্রেমীরা মিলেই এই সংগঠন তৈরি করেছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘২০০৮–এও ওই রুটে ৬৯টি বাস চলত। সেই সংখ্যা কমতে শুরু করে ২০১৮ সালে ২২–এ এসে দাঁড়ায়। শেষ কয়েক বছর একটি মাত্র বাস চলত। সেই বাসটিও এ বার স্ক্র্যাপ হয়ে যাবে — এত লম্বা একটা রুট পুরো বন্ধ হয়ে গেল।’

    কেন এমন হলো?

    জবাবে ৩ নম্বর রুটের শেষ বাসটির মালিক সুদীপ গোস্বামী বলেন, ‘রুট ছিল শ্রীরামপুর থেকে কলকাতার বাগবাজার। এত লম্বা রুটে কেউ যেতেন না। আমাদের প্রায় সব যাত্রীই ছিলেন শর্ট রুটের। কিন্তু, গত কয়েক বছরে অটো এবং টোটোর সংখ্যা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, শ্রীরামপুর থেকে বালি পর্যন্ত অংশে জিটি রোড মাঝে মধ্যে এতটাই সরু যে বাস চালানো অত্যন্ত কঠিন। ফলে দীর্ঘ সময়ে যানজটে আটকে থাকতে হতো।’

    এত পুরোনো একটা বাসরুটের এমন করুণ পরিণতি সম্পর্কে বেসরকারি বাসমালিকদের সংগঠন, অল বেঙ্গল বাস–মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘গত চার বছরে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় ৪০টির কাছাকাছি বাসরুট বন্ধ হয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে আমরা এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন রুট বাঁচানোর জন্য কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করতে দেখিনি।’

    বাসমালিকদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, অটো বা টোটোর হওয়া উচিত ছিল ‘লাস্ট পয়েন্ট অফ কানেকটিভিটি’ অর্থাৎ, অটো–টোটোর বাড়ি থেকে বাস চলার পথ পর্যন্ত চলবে। তবে এখন অটো–টোটোও বাসের প্রতিযোগী হয়ে পড়েছে। তারই প্রভাবে পর পর বাসরুট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)