কথায় আছে, পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে। তাই কি পুরোনো অফিসে ফিরে ফিরে আসে বঙ্গ–বিজেপি! ২০২৩–এর মার্চ মাস। মধ্য কলকাতার মুরলীধর সেন লেন থেকে বিজেপির রাজ্য দপ্তর স্থানান্তরিত হয় সল্টলেকে। নতুন অফিস থেকে কাজ শুরুর আগে ধুমধাম করে গৃহপ্রবেশও সারেন রাজ্য বিজেপি নেতারা।
কিন্তু বছর দুইও কাটল না। গুটিগুটি পায়ে আবার সেই মুরলীধর সেন লেনের পুরোনো রাজ্য অফিসে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন বঙ্গের বিজেপি নেতারা।
সল্টলেকের ভাড়া বাড়িতে বঙ্গ–বিজেপি নতুন রাজ্য দপ্তর খুলে বসলেও কর্মী–সমর্থকদের ভিড় আগাগোড়াই বেশি থাকত মুরলীধর সেন লেনে। এমনকী, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহার মতো বিজেপি নেতারাও সল্টলেকের অফিসে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এখন যান না।
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী গত এক বছরে সল্টলেকের পার্টি অফিসের থেকে বেশি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মুরলীধরের পার্টি অফিসেই। সূত্রের খবর, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও গাড়ি হাঁকিয়ে সল্টলেক যাওয়ার থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র মুরলীধর সেন লেনেই বৈঠক করতে বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছেন।
তাই মধ্য কলকাতার পুরোনো রাজ্য দপ্তরে নতুন একটি কনফারেন্স রুম তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বঙ্গ–বিজেপি নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বঙ্গ–বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলি এ বার থেকে ওই কনফারেন্স রুমেই হবে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের অনীহা অথবা দূরের জেলার কর্মীদের যাতায়াতের সমস্যাই বঙ্গ–বিজেপির ফের মুরলীধর সেন লেনমুখী হওয়ার একমাত্র কারণ নয়। নির্বাচনী ফলাফলের পরিসংখ্যানও বলছে, এ রাজ্যে বিজেপি যেটুকু সাফল্য পেয়েছে, তা ওই মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিস থাকাকালীনই।
বঙ্গ–বিজেপির এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘২০১৯–এর লোকসভা ভোটে এ রাজ্য থেকে আমরা ১৮টি আসনে জিতেছিলাম। তার আগে পঞ্চায়েত ভোটেও আমরা ভালো রেজ়াল্ট করেছিলাম। ২০২১–এ ক্ষমতায় আসতে না পারলেও বিধানসভায় আমাদের আসন তিন থেকে বেড়ে সাতাত্তর হয়েছিল। এই পর্বে আমাদের পার্টি অফিস মুরলীধর সেন লেনেই ছিল। সল্টলেকে চলে যাওয়ার পর একটা ভোটেও আমদের রেজ়াল্ট ভালো হয়নি।’
দলের এক মহিলা নেত্রীর সংযোজন, ‘সম্প্রতি ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়ে গেল। আমরা ছয়ে শূন্য। মাদারিহাট আসনটিও আমাদের হাতছাড়া হলো। সল্টলেকের নতুন রাজ্য দপ্তরে যাওয়ার পর থেকেই আমাদের নির্বাচনী বিপর্যয় শুরু হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অতীতে একাধিকবার জানিয়েছেন, সল্টলেকের পার্টি অফিসটি অস্থায়ী রাজ্য দপ্তর। খাতায়কলমে মুরলীধর সেন লেনেই বিজেপির রাজ্য দপ্তর থাকছে।
যদিও সুকান্ত ছাড়া বঙ্গ–বিজেপির আর কোনও সাংগঠনিক নেতার আচরণ দেখে তা মনে হয়নি দলের নিচুতলার কর্মীদের। জেলার নেতারা কেন মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিসে ভিড় করেন, তা নিয়ে একাধিকবার রাজ্য নেতাদের একাংশের ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁদের। তবে মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিসে নতুন কনফারেন্স রুম তৈরির সিদ্ধান্তের খবর ছড়িয়ে পড়তেই নিচুতলার বিজেপি নেতা–কর্মীরা বলছেন, ‘এতদিনে শীর্ষ নেতারা বুঝেছেন, পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে।’