সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
নেকড়ে, হায়নার মতো মাংসাশী প্রাণীদের সঙ্গে বসবাস তাঁদের। তা বলে একেবারে রয়্যাল বেঙ্গল! স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি বান্দোয়ানের কুদলবনি, কেশরা, বারুডি, নেকড়া, চেলাডুঙরির মতো আদিবাসী গ্রাম ও টোলাগুলির মানুষজন। এই এলাকাতেই রয়েছে বান্দোয়ানের গভীর অরণ্য রাইকা। পাহাড় ও অজস্র টিলা নিয়ে থাকা এই জঙ্গল যথেষ্ট গভীর। ঝাড়গ্রাম থেকে আপাতত এখানেই ঘাঁটি গেড়েছে উধাও হয়ে যাওয়া বাঘিনী জ়িনাত।
রবিবার সকাল থেকে এই গ্রামগুলিতে বাঘ নিয়ে সতর্কবার্তা প্রচার করেছে বন দপ্তর। জঙ্গলে যাওয়া বা গবাদি পশু পাঠাতে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। বাঘ এসেছে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই চরম আতঙ্ক গ্রাস করেছে গ্রামবাসীদের। চেলাডুঙরির সংক্রান্তি মুর্মু বলেন, ‘পশুপালন এবং জঙ্গলের কাঠ, পাতা সংগ্রহ করে বেশির ভাগ মানুষের চলে। বাঘের খবর আসতেই জঙ্গলে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে তার থেকেও বেশি চিন্তায় রয়েছি বাড়ির গোরু–ছাগলগুলিকে নিয়ে।’
ওই গ্রামের বধূ সমলা মুর্মু বলেন, ‘ভোরেই গোরু–ছাগল ছেড়ে দেওয়া হয়। জঙ্গলে গিয়ে পাতা খেয়ে আবার ফিরে আসে। এখন সেই জঙ্গলেই আর পাঠানো যাবে না। পাতা সংগ্রহ করাও যাবে না। কী হবে কে জানে।’ নেকড়ার বাসিন্দা সুরেশ মাঝির নজর জঙ্গলের দিকে। বলেন, ‘দুপুর থেকে জঙ্গলের দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছি। বন দপ্তরের কর্মীরাও খোঁজ নিচ্ছেন। তবে রাত নিয়ে খুব চিন্তায় রয়েছি। রাতের অন্ধকারেই তো জঙ্গল থেকে বাঘ লোকালয়ে চলে আসে। তখন বিপদ হতে পারে।’
কুদলবনির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, জঙ্গলে শিকারের অবশ্য খুব একটা অভাব নেই। রয়েছে বনশুয়োর ও খরগোশ। তবে এর থেকে অনেক সহজ গবাদি পশু শিকার করা। এটাই সব থেকে বেশি ভাবাচ্ছে তাঁদের।
মহিলারা অবশ্য বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তিত। চেলাডুঙরির লক্ষ্মী হেমব্রম বলেন, ‘বাচ্চাদের ঘরে কতক্ষণ আটকে রাখা সম্ভব? ওদের রাস্তায় বার করতেও পারছি না। বাঘ যেন দ্রুত ধরা পড়ে নিজের এলাকায় ফিরে যায়।’ পুরুলিয়ার বনকর্মীরা অবশ্য গ্রামবাসীকে অত উতলা না হওয়ার কথাই বলছেন।
বনকর্মীরা জানাচ্ছেন, গবাদি পশু মারা পড়লে তার জন্য নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ রয়েছে। আর বাঘ যে হেতু ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে তাই লোকালয়ে আসার আগেই তাকে আটকে রাখা সম্ভব। কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, ‘মাইকে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে প্রচার চালানো হচ্ছে। আপাতত জঙ্গলের ধারে কাছে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বন দপ্তর এলাকায় রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।’