• স্কুল চলছে ‘রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে’, বেজায় খুশি খুদে পড়ুয়ারা
    এই সময় | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • কৌশিক সেন, রায়গঞ্জ

    এ যেন অনেকটা ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল’-এর মতো ঘটনা। কয়েকদিন আগে পর্যন্তও ভবনগুলো ছিল আর পাঁচটা আটপৌরে স্কুলের মতোই। এখন স্কুলবাড়ির জায়গায় কোথাও দাঁড়িয়ে আছে আস্ত একটি বাস কিংবা গোটা একটি ট্রেন। শিশুদের স্কুলের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে উত্তর দিনাজপুরের জেলা প্রশাসন এমনই অভিনব পদক্ষেপ করেছে।

    জেলাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মীনা জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে মডেল এমন স্কুল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জ্ঞানালয়’। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি স্কুলেও কাজ চলছে। স্কুলবাড়ি দেখতে বাস বা ট্রেনের মতো হওয়ায় স্কুলের পড়ুয়ারাও বেজায় খুশি।

    ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেলাশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সুরেন্দ্রকুমার মীনা। তারপরে অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি জেলার শিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নতির ব্যাপারেও তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন। প্রশাসনিক স্তরে এ ব্যাপারে খোঁজ নেন। বিভিন্ন এলাকায় সাইকেল নিয়ে নিজেও কথা বলেন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। তারপরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, স্কুল ভবনগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলার পাশাপাশি পড়াশোনারও আধুনিক ব্যবস্থা করতে হবে। তা হলে শিশুরা স্কুলে যেতে আগ্রহী হবে। পঠনপাঠনের মানও উন্নত হবে।

    জানা গিয়েছে, প্রথম ধাপে জেলার ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১০০টি মডেল স্কুল তৈরি করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ২৬টি বিদ্যালয়কে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। কিছু প্রাথমিক স্কুলকে চিহ্নিত করে কাজও শুরু করে দেওয়া হয়। স্কুলগুলোকে আকর্ষণীয় করতে বিভিন্ন ধরনের ওয়াল পেইন্টিং থাকবে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য থাকবে কিচেন ও মেডিসিনাল গার্ডেন। তৈরি হবে স্মার্ট ক্লাসরুমও। সেখানে ৭৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে বোর্ড ও ইন্টারনেট পরিষেবা থাকবে। থাকবে হরেক কিসিমের লার্নিং মেটেরিয়াল ও গ্রন্থাগার। সঙ্গে খেলাধুলার ব্যবস্থাও।

    রায়গঞ্জ শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে, কালিয়াগঞ্জ কলেজের পাশেই ভাণ্ডার প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা গেল, স্কুল কোথায়, ধানের জমির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে আস্ত একটি ‘ট্রেন’! ট্রেনের গায়ে লেখা— রাধিকাপুর এক্সপ্রেস। ট্রেনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল, লেখাপড়ায় ব্যস্ত খুদে পড়ুয়ারা। লোহার বদলে কংক্রিটের তৈরি এই রধিকাপুর এক্সপ্রেস। সেটিই আসলে ভান্ডার প্রাথমিক বিদ্যালয়। কালিয়াগঞ্জের ভাণ্ডার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সম্প্রতি এ ভাবেই সাজানো হয়েছে। বিদ্যালয়ে চারটে শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিসঘর আছে। প্রতিটি ঘরকেই রাধিকাপুর এক্সপ্রেসের আদলে তৈরি করা হয়েছে।

    স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির তন্ময় বর্মনের কথায়, ‘ট্রেন দেখতে আমার দারুণ লাগে। বাবার সঙ্গে কালিয়াগঞ্জ শহরে গেলে সুযোগ পেলেই স্টেশনে ট্রেন দেখতে যাই। এখন আমাদের স্কুলটাই রেলগাড়ির মতো দেখতে হয়ে গিয়েছে। ক্লাসে আসতে এখন খুব ভালো লাগে। আমার বন্ধুরা কেউ আর স্কুল কামাই করে না। স্কুলে এলে মনে হয়, আমরা যেন ট্রেনে বসেই লেখাপড়া করছি।’

    বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুন্না দাস জানিয়েছেন, স্কুলভবন দেখতে এখন ট্রেনের মতো। ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বেড়েছে। পড়ুয়াদের উপস্থিতিও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কালিয়াগঞ্জ ব্লকেরই অনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাহিনগর ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের ভবনটিকে ইতিমধ্যেই একটি বাসের আদল দেওয়া হয়েছে। স্কুলের দেওয়ালে আঁকা হয়েছে মনীষীদের ছবি ও পাঠ্যবইয়ে পড়া বিভিন্ন চরিত্র৷ পারিবারিক বিন্যাস ও সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। ক্লাসরমের ছাদে সৌরমণ্ডল এঁকে সৌরজগতের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সহজ উপায়ে পরিচিত হওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোজিৎ দাস বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্কুলটিকে আধুনিক ও ছাত্রছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন রকম ওয়াল পেইন্টিং, ডিজিটাল বোর্ড, গার্ডেন তৈরির পাশাপাশি সব কিছুই নতুন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে। এ সব করার ফলে সবচেয়ে খুশি হয়েছে শিশুরা। ওরা এখন মহানন্দে লেখাপড়া করছে।’

    জেলাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মীনা বলেন, ‘শিশুদের স্কুলমুখী করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ১০০টি ও পরে আরও ২৬টি স্কুলে কাজ হবে। প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। খুব শিগ্গির এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)