রাজ্যে ভাতা-ভর্তুকি-খয়রাতিতেই 'ভাঁড়ে মা ভবানী', উপেক্ষায় পরিকাঠামো? চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট
আজ তক | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বিভিন্ন আর্থিক প্রকল্প, বেতন, ঋণ মুকুব, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো নিত্যদিনের খরচ বেড়েছে। সেই তুলনায় নতুন প্রকল্প, পরিকাঠামো খাতে খরচ বৃদ্ধির হার কম। রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান সেটাই বলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কারণে(সরাসরি আর্থিক সাহায্য়, সরকারি প্রকল্প, বিভিন্ন ক্যাশ-ইন-হ্যান্ড স্কিম) এই পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। রাজ্যের ঋণের পরিমাণও সুপারিশকৃত সীমার থেকে বেশি। পরিকাঠামো প্রকল্প কম থাকার কারণে ভবিষ্যতে উন্নয়নের গতি কমতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছে। তবে দ্রুত এই ব্যবধান মিটতে পারেও বলে আশ্বাস দিচ্ছেন অনেকে।
রেটিং সংস্থা কেয়ারএজের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের রেভেনিউ এক্সপেন্ডিচার(রাজস্ব ব্যয়) প্রায় ১৩.৫% বেড়েছে। কিন্তু ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচারে(পুঁজি ব্যয়) খরচ বেড়েছে মাত্র ৭.৭%।
উদাহরণস্বরূপ ধরুন, কোনও পরিবারে বাবা আয় করেন। তাঁর ছেলের খাওয়াদাওয়া, পোশাক খাতে খরচ বেড়েছে। কিন্তু ছেলের ভবিষ্যতের জন্য একটি দোকানঘর তৈরি করছিলেন, সেই খাতে তুলনায় কম খরচ করেছেন।
এর ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে রাজ্যে রাজস্ব ও পুঁজি ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যের অভাব স্পষ্ট। তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই যে এমনটা হচ্ছে, সেটা ভাবলে ভুল করবেন। ভারতের অন্যান্য বড় রাজ্যগুলিতেও এই একই প্রবণতা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থ দফতরের প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র জানিয়েছেন, ২০১০-১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের পুঁজি ব্যয় ছিল ২,২২৬ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ সালে তা বেড়ে ৩৫,৮৬৫.৫৫ কোটি টাকায় পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে, এই ভারসাম্যহীনতা সত্ত্বেও, পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগের অঙ্ক নিঃসন্দেহে বাম আমলের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মেনে বিনামূল্যে বিভিন্ন পরিষেবা, আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে সরকার। আর্থিকভাবে দুর্বলদের ঋণ মুকুব করা হচ্ছে। এই ধরণের কর্মসূচির কারণেই রাজস্ব ব্যয়ে বৃদ্ধি বেড়েছে। প্রথমার্ধে রাজ্যের ফিসকাল ডেফিসিট(GSDP-র) ছিল ৩.৭ শতাংশ। এটি পঞ্চোদশ অর্থ কমিশনের নির্ধারিত ৩ শতাংশের তুলনায় বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে উন্নয়নের গতি এর ফলে কিছুটা প্রভাবিত হতে পারে। কারণ পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য পুঁজি ব্যয়, তাদের টার্গেটের চেয়ে ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রেও প্রথম সাত মাসে ফিসকাল ডেফিসিট ৭.৫ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। পুঁজি ব্যয়ের ক্ষেত্রে সেখানেও স্লথ গতির নিদর্শন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যকে অবশ্যই নিত্যদিনের রাজস্ব ব্য়য় চালিয়ে যেতে হবে। তবে তার সঙ্গে ব্যালেন্স রেখেই পরিকাঠামো উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুঁজি ব্যয়ে আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন।