• বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান ফ্লপ, মিঠুনকে মাঠে নামানোর মধ্যে সেই ইঙ্গিত পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • বাংলায় বিজেপি-র সদস্য সংগ্রহ অভিযান সফল করতে মাঠে নেমেছেন একসময়ের বলিউড সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী। বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য এই সদস্যতা অভিযান নিয়ে নতুন তথ্য দিয়ে আশ্বস্ত করলেন রাজ্যবাসীকে। বলেন, সবসময় যা দরকার তার থেকে একটু বেশি টার্গেটই দেওয়া হয়।

    কিন্তু বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক থামছে না। কারণ, গত ২৭ অক্টোবর সল্টলেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে সদস্যপদ অভিযানের সূচনা হয়। সেখানে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এক কোটি সদস্য সংগ্রহের টার্গেট দেওয়া হয়। অথচ ওই তারিখের দশ দিন আগে মোট সদস্য সংগ্রহ হয়েছে ২৭ লক্ষের কিছু বেশি। যা টার্গেটের মাত্র ২৭ শতাংশ। সুতরাং মিঠুনের দেওয়া ১০-১২ অঙ্কের ধারেকাছেও পৌঁছচ্ছে না। এমনকি ‘পাশ মার্ক’ ৩৪ পেতে গেলে কমপক্ষে ৩৪ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। সেই লক্ষ্য থেকে এখনও অনেক দূরে রয়েছে রাজ্যের গেরুয়া শিবির। যা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পূরণ হওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার।

    সেজন্য বলিউড অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীই এখন রাজ্য বিজেপি-র একমাত্র ভরসা। তাঁকে গত শনিবার থেকে মাঠে নামানো হয়েছে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে। এরইমধ্যে তিনি একাধিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। প্রথম দিন হুগলিতে গিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এমনকি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েও বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। লোকসভা নির্বাচনে হুগলিতে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় হেরে যাওয়ার জন্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেন। মিঠুনের কথায়, ‘এখানে যতগুলো বিধানসভা আমি দেখেছি সবগুলোতেই জেতা আছে। কিন্তু আমরা জিততে পারিনি। এর একমাত্র কারণ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যেটা খুবই দুঃখের। যদি সবাই কাজ করত এখানে, তা হলে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে হারতে হত না। এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাজ করেছে।’

    শনিবার মিঠুন আরও বলেন, ‘বস (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে বলে রেখেছেন নো মার্সি। যারা কাজ করবে না তাদেরকে সরে যেতে হবে। এত জায়গায় ঘুরে এলাম, সব জায়গায় কি জিততে পেরেছি? না। কারণ, আমরা সব জায়গায় কাজই করতে পারিনি।’ পরের দিন রবিবার টিটাগড়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে খানিকটা ধরেই ব্যাট চালান মহাগুরু। তাঁর মতে, “নিজেদের কিছু ভুল-ত্রুটি আছে। সেগুলো ঠিক করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “টার্গেট একটু বেশি করেই দেওয়া হয়। আমরা ১২ বললে হয় ১০। আসলে ১০-ই টার্গেট।”

    এদিকে সোমবার বিজেপি দলের হয়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের কর্মসূচিতে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের পাঁচড়াতে আসেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। কিন্তু এদিন দুপুরে দলীয় ওই কর্মসূচির ময়দান ছেড়ে চলে যেতে হলো। এর অন্যতম কারণ দলীয় কর্মী সমর্থকদের বিশৃঙ্খলা। সোমবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচড়া অঞ্চলে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সকলে আসেন। ছিলেন দলের শীর্ষ নেতা নেত্রীরাও। চারিদিকে ছিল নিরাপত্তার ঘেরাটোপ। তবে মিঠুন চক্রবর্তী গাড়ি থেকে নামার পরই তাঁকে দেখতে আর ছবি তোলার হিড়িকে উপস্থিত সকলের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায়। চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে মিঠুন চক্রবর্তী নিজেও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। যার ধাক্কা দলের নেতারা সামাল দিতে পারেন নি। ফলে মিঠুন চক্রবর্তী সরাসরি কর্মসূচির জায়গা থেকে ফিরে যান। এ ব্যাপারে বিজেপির জেলা নেতারা সে ভাবে মুখ খোলেন নি।

    সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারনা, মিঠুনের কথাতেই বোঝা যায়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সরাসরি মানতে না চাইলেও বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। যদিও দলীয় নেতাদের মতে, বাংলায় সংগঠন মজবুত করার জন্য দলের পক্ষ থেকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে মানুষের মধ্যে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)