প্রসূতির শরীরে দুটি জরায়ু , জটিল অস্ত্রোপচার বনগাঁর হাসপাতালে, সদ্যোজাতকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন মা
প্রতিদিন | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: প্রসবের জন্য অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের টেবিলে প্রসূতিকে দেখে অবাক হয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কারণ, তাঁর দুটি জরায়ু। তার মধ্যে একটি আবার মূত্রথলির নিচে আড়াল হয়ে রয়েছে। এদিকে সন্তানকে প্রসব করিয়ে মায়ের শরীর থেকে আলাদা করতে হবে। একটি জরায়ুও মায়ের শরীর থেকে বাদ দিতে হবে। হাতে খুব একটা বেশি সময়ও নেই। তার মধ্যেই দ্রুত এত কিছু করতে হবে। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর এক হাসপাতালে এই জটিল অস্ত্রোপচার হল।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পূজা বিশ্বাস নামে এক সন্তানসম্ভবা গত ১৯ তারিখ বনগাঁর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেদিনই অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচার শুরু হতেই হতবাক হন চিকিৎসকরা। কারণ, ওই মহিলার দুটি জরায়ু শরীরে রয়েছে। আগে পরীক্ষায় সেই বিষয়টি ধরাও পড়েনি। ওই মুহূর্তে পরিস্থিতি যথেষ্ঠ জটিল হয়ে যায়। অস্ত্রোপচারের ঘরেই আলোচনা করেন চিকিৎসক ও নার্সরা। প্রথমে অস্ত্রোপচার করে সন্তানকে একটি জরায়ু থেকে বার করা হয়। মায়ের থেকে সদ্যোজাতকে আলাদা করে এবার বাকি অস্ত্রোপচার শুরু হয়। গোটা বিষয়টিই ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রবল।
অন্য জরায়ুটি শরীর থেকে বাদ দেওয়া হয়। মূত্রনালির যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেই বিষয়েও সতর্ক ছিলেন চিকিৎসকরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে এই অস্ত্রোপচার। প্রতিকূলতার মধ্যেও সাফল্য পেলেন চিকিৎসকরা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা বনগাঁর এক হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। তেমনই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসক মোহিতোষ মণ্ডল বলেন, “মহিলাদের শরীরে একটি জরায়ু থাকে। এই ধরনের দুটি জরায়ুকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ইউটোরাইন ডাইডিলকাস ইউনিকলিস বলা হয়। এটি বিরল ঘটনা।” ওই মহিলা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সদ্যোজাত ও মাকে অস্ত্রোপচারের পরে বিশেষ নজরদারিতেও রাখা হয়।
আজ সোমবার সন্তানকে নিয়ে পুকুরিয়া এরেপোতা বাজার এলাকার বাড়িতে ফিরলেন মা। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা হবে না বলেই চিকিৎসকরা। আমি খুব খুশি|”