অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম
বাল্যবিবাহ এবং নারী পাচার রুখতে ‘শপথ’ নিচ্ছে জঙ্গলমহলের খুদেরা। ‘শপথ’ শুধু মুখেই নয়, বাস্তবে প্রতিফলনও ঘটিয়ে চলেছেন তারা। পুলিশ ইন্সপেক্টর সৌরভ ঘোষের লেখা নাটক ‘শপথ’। পড়াশোনার পাশাপাশি নাটকের মহড়ার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা।
হাতে-কলমে অভিনয় শিখে সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চস্থ করছে পুলিশের অবৈতনিক ‘দিশা কোচিং’-এর পড়ুয়ারা। এই নাটক রীতিমতো সাড়াও ফেলেছে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মনে। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের উদ্যোগে বেলপাহাড়ির ব্লকের তামাজুড়িতে চলে এই সেন্টার।
এলাকার দুঃস্থ পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পড়াশোনার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল। সিভিকদের কাছে প্রতিদিন টিউশনি নিতে আসে অনেক খুদে। শুধু লেখাপড়াই নয়, সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী হিসেবে সচেতনতামূলক বিভিন্ন বিষয়ও শেখানো হয়। প্রতি শনিবার চলে নাটকের মহড়াও।
মূল কাহিনি হল, বছর ষোলোর একটি মেয়ে পড়াশুনায় ভালো। কিন্তু তাকে বিয়ে দেওয়ার দিন স্থির করেছে পরিবার। মেয়েটি বিয়েতে রাজি নয়। সে জানায় তার ছোট বোন পায়েলকে। দিদি-বোন একই স্কুলে পড়ার সুবাদে পরের দিন বোন প্রধান শিক্ষককে দিদির বিয়ের বিষয়টি জানায়।
হেডমাস্টার ঘটনার খোলাসা করেন বিডিও এবং থানার আইসিকে। অন্যদিকে, নাটকের উপকাহিনিতে দেখা গিয়েছে, পায়েলের এক বান্ধবীর সঙ্গে একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক। ছেলেটি ফুঁসলিয়ে নাবালিকা বান্ধবীকে বিয়ে করে অন্য রাজ্যে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পারে পায়েল। পুলিশের কাছে ঘটনাটি জানায়।
তারপর পায়েলের দিদির বিয়ে আটকানো তো গেছেই, ঠিক তেমনই তার বান্ধবীকে ভিন রাজ্য থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, প্রেমিক ছেলেটি নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত। এ ভাবে আগেও অন্য এলাকার মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বিয়ে করে ভিন রাজ্য নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেছিল। নাটকের অন্তিম পর্যায়ে দেখা গিয়েছে, সচেতনতার বার্তা দিতে ব্রাহ্মণ, ঘটক, মাঝি বাবা, মৌলবিরা একত্রে বাল্যবিবাহ রোধে ‘শপথ’ নেন। প্রত্যন্ত গ্রামের পড়ুয়ারা প্রথমবার এই নাটকে অভিনয় করেছে।
রবিবার ঝাড়গ্রামের শিলদায়, জেলা বইমেলাতে ‘শপথ’ নাটক মঞ্চস্থ করে ১৮ জন পড়ুয়া। ইতিমধ্যে তারা বেলপাহাড়ি স্কুল, বাঁশপাহাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি, ভুলাভেদায় কালীপুজোতে এই নাটকটি মঞ্চস্থ করেছে। এর মূল উপজীব্য বিষয় হলো, বাল্যবিবাহ রোধে সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা।
পাশাপাশি, কাজের টোপ দিয়ে বা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনেক সময়ে মেয়েদের অন্য রাজ্যে পাচার করা হয়ে থাকে, সেই বিষয়গুলি তুলে ধরা। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের স্বনির্ভর করতে রাজ্য সরকারের নানাবিধ প্রকল্পের যে সুযোগ সুবিধা রয়েছে তাও এই নাটকের অংশ।
৪৫ মিনিটের নাটকে ব্রাহ্মণের ভূমিকায় কাঞ্চন কর্মকার, ঘটকের ভূমিকায় শুভজিৎ কর্মকার, ষোল বছরের পাত্রীর ভূমিকায় দীপিকা প্রামাণিক, পায়েলের ভূমিকায় লক্ষ্মী মাহাতো, মাষ্টারমশাই রোহিত সোরেন, বিডিও বিমল পাল, আইসি সম্রাট বাগাল, মাঝি বাবা মনোজ প্রামাণিক, মৌলবী আকাশ ফলকার, মহিলা পুলিশ চম্পা মাহাতো অভিনয় করেছেন।
নাটকে অভিনীত স্কুলপড়ুয়া শুভজিৎ, লক্ষী মাহাতোরা বলে, ‘অভিনয় করতে পেরে খুবই খুশি। গ্রামাঞ্চলের ঘটনাগুলিকে নাটকে চোখে আঙুল দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সিভিক কাকুদের সহয়তায় অভিনয় শিখেছি। পুলিশের সহযোগিতায় ভিন্ন জায়গায় নাটক মঞ্চস্থ করি।’