এই সময়, শ্যামপুর: এক অদ্ভুত সমাপতন। যাকে অনেকেই ‘শুভ লক্ষণ’ বলে মনে করছেন।প্রত্যন্ত এলাকার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সিজ়ার রুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যখন চলছে, তখন সেই সিজ়ার রুমেই সিজ়ারিয়ান বেবির জন্ম দিলেন এক মহিলা। হাওড়া জেলার শ্যামপুর–২ নম্বর ব্লকের ঝুমঝুমি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা।
ওই গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রই শ্যামপুর–২ নম্বর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই অনুষ্ঠান চলাকালীন, বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ সিজ়ার রুমে সিজ়ার করা হয় এক অন্তঃসত্ত্বার। তাঁর নাম তানজিলা খাতুন। তিনি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বছর একত্রিশের তানজিলা এ–ই প্রথম বার মা হলেন। তাঁর বাড়ি শ্যামপুর–২ নম্বর ব্লকের অযোধ্যার চালিতাপাড়ায়।
তানজিলাকে শুক্রবার ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিশলয় দত্ত তখন ওই গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। শনিবারের অনুষ্ঠানের জন্য সিএমওএইচ শুক্রবারই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন। অন্তঃসত্ত্বার মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে সিএমওএইচ ওই মহিলার সিজ়ার করাতে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন। সে কথা জানানো হয় তানজিলার স্বামী সিরাজ খানকে।
ব্লক মেডিক্যাল অফিসার উজ্জ্বল দাস বলেন, ‘সিএমওএইচের পরামর্শে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রোহন হালদার ও অ্যানেসথেটিস্ট অসীম বিশ্বাসকে সিজ়ারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।’
সিজ়ার সফল হওয়া এবং সদ্যোজাত ও প্রসূতির সুস্থ থাকার খবর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে পৌঁছনো মাত্র হাওড়া জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ, ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জুলফিকার আলি মোল্লা ঘোষণা করেন, ‘আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, এই মাত্র নতুন সিজ়ার রুমে সিজ়ারের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক মহিলা। এই প্রত্যন্ত এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সিজ়ারের সুবিধে পাওয়া যাবে, সেটা স্বপ্নেও ভাবা যেত না।’ হাততালিতে ভরে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল।
হাওড়ার এই প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হয় ষাটের দশকে। তার পর এ–ই প্রথম সেখানে সিজ়ারের সুবিধে পাওয়া গেল। শ্যামপুর–২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ দীপক দাস জানিয়েছেন, ওই প্রসূতিকে তিনি বিশেষ সম্মান জানাবেন। আপাতত সপ্তাহে দু’দিন এই সিজ়ার রুম খোলা থাকবে। ঝুমঝুমি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শনিবার ওই সিজ়ার রুম ছাড়াও একটি সভাকক্ষের উদ্বোধন হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল ওই সভাকক্ষেই। উদ্বোধন করেন শ্যামপুরের বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল। সিজ়ার রুম ও সভাকক্ষের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাওড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাবেরী দাস, সহকারী সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য, শ্যামপুর–২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি নদেবাসী জানা, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দীপক দাস, উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক মানসকুমার মণ্ডল প্রমুখ।
সিজ়ার রুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রত্যেক বক্তাই কিন্তু সিজ়ার–নির্ভরতা কমিয়ে নর্মাল ডেলিভারির উপর গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। হাওড়ার সিএমওএইচ কিশলয় দত্ত বলেন, ‘বহু অন্তঃসত্ত্বা নিজেরাই চান, সিজ়ার হোক। এই প্রবণতা কমাতে হবে।’ তিনি জানান, হাওড়া জেলায় গত ১০ মাসে প্রায় যে ছ’হাজার বাচ্চার জন্মেছে, তাদের মধ্যে মাত্র দু’হাজারের জন্ম হয়েছে নর্মাল ডেলিভারিতে।