৩০ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে নিজেদের অধিকার আদায়ে সক্ষম হলেন আদিবাসী মহিলারা। দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, এ বার আদিবাসী মেয়েরাও বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তির সমান অধিকারী হবেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সিটি রবিকুমার এবং বিচারপতি সঞ্জয় কারোলের ডিভিশন বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায়ে জানিয়েছে আদিবাসী মেয়েরা যাতে বাবার সম্পত্তির সমান ভাগ পান তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আইন সংশোধন করতে হবে। এর ফলে আদিবাসী মহিলাদের কয়েক যুগের বঞ্চনার অবসান ঘটল বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
ছত্তিসগড়ের এক আদিবাসী ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরিদের মধ্যে সম্পত্তির ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে এ নিয়ে নিম্ন আদালতে মামলা করেন পরিবারের ছেলেরা। নিম্ন আদালত জানিয়ে দেয়, ১৯৫৬ সালের হিন্দু সাকসেশন আইন অনুযায়ী হিন্দু মেয়েরা বাবার সম্পত্তির অধিকারী হলেও আদিবাসী মেয়েরা সম্পত্তির ভাগ পাবে না। পরে সেই মামলা গড়ায় হাইকোর্টে।
হাইকোর্টের রায়ও আদিবাসী মহিলাদের বিরুদ্ধেই যায়। কিন্তু সুপ্রিম সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের সকলের সমান অধিকারের উল্লেখ করে বলে, হিন্দু মেয়েরা বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তির সমান ভাগ পান। আদিবাসী মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম হওয়া উচিত। আইনজীবী কল্যাণী মুন্ডা বলেন, ‘এ এক যুগান্তকারী রায়। বহুদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটবে। এই রায়ের ফলে বহু আদিবাসী মহিলা উপকৃত হবেন।’
আদিবাসী ঐক্য মঞ্চের মুখপাত্র তথা আদিবাসী ডেভেলপমেন্ট কালচারাল বোর্ডের সদস্য শিবশঙ্কর সোরেন বলেন, ‘আমাদের সমাজে মহিলারা কোনও দিনই বাবার সম্পত্তির সমান ভাগ পেতেন না। তবে তাঁদের হয়তো কিছুটা জমি দেওয়া হতো। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমাদের সমাজে ভালো রকম প্রতিক্রিয়া হবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের নেতারা নিশ্চয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখবেন।’
ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের (বাদল কিস্কু নেতৃত্বাধীন) ঝাড়গ্রাম জিলা পারগানা সভাপতি ঢাঙ্গা হাঁসদা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসব। সেখানে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটা আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেব।’