• রক্ষণাবেক্ষণে চরম উদাসীন, ধ্বংসের মুখেই মোতিঝিল, হতাশ পর্যটকরা 
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, লালবাগ: রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম সাবেক নবাবি তালুক মুর্শিদাবাদ। শহরের বুক চিরে চলে গিয়েছে ভাগীরথী। তার দু’পাড়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে হাজারদুয়ারি প্যালেস মিউজিয়াম, কাটরা মসজিদের কথা না বললেই নয়। এহেন ইতিহাসের শহর মুর্শিদাবাদেই ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে কয়েক কোটি টাকা খরচে মোতিঝিলের পাশেই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠে প্রকৃতি তীর্থ পার্ক। যদিও পর্যটকদের কাছে তা মোতিঝিল নামেই অধিক পরিচিত। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকৃতি তীর্থকে অত্যাধুনিক পার্কের আদলে সাজিয়ে তোলা হয়। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড, সুরের ঝর্ণা, ওয়াচ টাওয়ার, বাচ্চাদের বিনোদন সামগ্রী কী নেই এখানে। পার্ক ঘুরে দেখার জন্য বয়স্কদের জন্য গলফ কার, প্যাডেল বোট, কারুতীর্থের ব্যবস্থা করা হয়। এহেন অত্যাধুনিক পার্ক প্রথম থেকেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পর্যটন মরশুমে পর্যটক সংখ্যার নিরিখে নবাবি স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন হাজারদুয়ারি প্যালেস মিউজিয়ামকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু, নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা আজ ধ্বংসপ্রায়। ফলে মোতিঝিলে এসে পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। 


    মূলত মোতিঝিলের লাইট অ্যান্ড সাউন্ড ও সুরের ঝর্ণার টানেই পর্যটকরা ছুটে আসতেন। কিন্তু, গত পাঁচ বছর ধরে তা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। সুরের ঝর্ণা তিন বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের প্রথম দিকে চালু হয়। কিন্তু, সেটিও মাঝেমধ্যে বিগড়চ্ছে। ওয়াচ টাওয়ারের মাথায় চেপে পার্কের বিস্তীর্ণ এলাকা সহ পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার প্রকৃতির শোভা দেখা যেত। গত চার বছর ধরে ওয়াচ টাওয়ারের প্রবেশ গেটে তালা ঝুলছে। বাচ্চাদের বিনোদন সামগ্রী ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে। পার্ক ঘুরে দেখতে সিনিয়র সিটিজনদের জন্য গলফ কার নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। প্যাডেল বোটও বিকল হয়ে জঙ্গলের মধ্যে পড়ে রয়েছে। কারুতীর্থের ঘরগুলি ভাঙাচোরা, দরজায় তালা ঝুলছে। পার্কের চারিপাশে অধিকাংশ বাতি অকেজো। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ঢেকে যায়। 


    স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, যে সমস্ত জিনিসের জন্য পর্যটকরা ভিড় জমাতেন সেগুলি সমস্তই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সেই কারণে পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, পার্কে পর্যটকরা এসে হতাশ হয়ে ফিরে যান। 


    লালবাগের প্রবীণ বাসিন্দা মিজানুর শেখ বলেন, সন্ধ্যার পর লাইট অ্যান্ড সাউন্ড ও সুরের ঝর্ণা আট থেকে আশি, সকলকে মোহিত করত। সন্ধ্যার পর দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ত। কিন্তু, এখন কোথায় কী!


    কলকাতা থেকে পরিবার নিয়ে মুর্শিদাবাদ ঘুরতে এসেছিলেন ব্যাঙ্ককর্মী সৌমিত্র পাল। সারাদিন অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলি দেখে পড়ন্ত বিকেলে মোতিঝিলে এসেছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই হতাশ হয়ে বেরলেন। সৌমিত্রবাবু বলেন, হাজারদুয়ারি ও মোতিঝিল দেখতেই ছুটি নিয়ে মুর্শিদাবাদ এসেছিলাম। কিন্তু, মোতিঝিল খুব হতাশ করল। 


    মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, প্রকৃতি তীর্থ বা মোতিঝিল মুর্শিদাবাদের পর্যটনে নতুন পালক জুড়েছিল। বেশ কিছুদিন ধরে অনেক বিনোদন সামগ্রী অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। জেলা পর্যটন দপ্তর পার্কটিকে তার যৌবন ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নিক।


    লালবাগ মহকুমা শাসক বনমালি রায় বলেন, পার্কটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)