কোনওমতেই ফাঁদে পা দিতে নারাজ জ়িনাত। ছাগল, মোষ কোনও টোপ গিলছে না সে। তাকে নাগালে পেতে নানা টোপ দিচ্ছেন বন দপ্তরের কর্মীরা। কিন্তু তার পরেও কোনও কিছুতেই বাগে আনা গেলো না বাঘিনি জ়িনাতকে। এ বার তাই নতুন কৌশল নিচ্ছে বন দপ্তর। ফাঁকা জায়গায় টোপ রেখে এ বার ঘুমপাড়ানি বন্দুক নিয়ে খাঁচাতেই অপেক্ষা করবেন বনকর্মীরা। লক্ষ্য, খাঁচায় ধরা না দেওয়া বাঘ ফাঁকা জায়গায় মাংসের স্বাদ নিতে এলে তাকে ট্র্যাঙ্কুলাইজ় করা। তার পর তাকে যথাস্থানে ফেরত পাঠানো। পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ ডিভিশনের ডিএফও পূরবী মাহাতো ‘এই সময় অনলাইন’-কে বলেন, ‘বাঘ ধরতে স্ট্র্যাটেজি বদলানো হচ্ছে। সবভাবেই বাঘটিকে বাগে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ জানা গিয়েছে, এখনও প্রায় একই জায়গাতে অর্থাৎ রাইকার পাথুরে জঙ্গলেই অবস্থান করছে বাঘিনি।
জ়িনাতকে নিয়ে কিছুটা হতাশই হচ্ছেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা। সোমবারও পেরিয়ে মঙ্গলবার সকাল অবধিও পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকার জঙ্গলের ভিতরেই রয়েছে ওডিশার সিমলিপাল থেকে আসা বাঘিনি। ঘোরাফেরা করেছে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই। জঙ্গলের তিন প্রান্তে মোষ, বুনো শুয়োর, ছাগল বেঁধে টোপ দিলেও খাবারের লোভে একবারও তাদের খাঁচা পর্যন্ত আসছে না সে। দূর থেকে দেখেই ফিরে গিয়েছে।
পাশাপাশি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে শ্যাডো জ়োন। বাঘিনির গলায় রয়েছে রেডিয়ো কলার। এর মাধ্যমে তার বর্তমান অবস্থান স্যাটেলাইট সিগন্যালের মাধ্যমে জানা সম্ভব। কিন্তু জঙ্গলের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পাওয়া যাচ্ছে না স্যাটেলাইট সিগনাল। ফলে বাঘিনির হদিশ পেতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে তাকে কী ভাবে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা ভেবে রীতিমতো ঘুম উড়েছে বিশেষজ্ঞদের।
টোপ কেন গিলছে না জ়িনাত? বনদপ্তরের এক কর্তা বলছেন, ভরা পেটে থাকলে বাঘিনি বারবার খাবারের খোঁজ করবে না। জঙ্গলে যে একেবারেই খাবার নেই তা তো নয়। পাশাপাশি সে অত্যন্ত চালাক। আগে এভাবে তাকে ধরা-ছাড়া হওয়ার কারণে সহজে ফাঁদে পা দিতে চাইছে না সে।
আর সে কারণেই নতুন কৌশল? উত্তরে ওই কর্তা বলেন, ‘বাঘ ধরতে নানান পন্থাই অবলম্বন করা হয়েছে। তার মধ্যেই খাঁচায় বনকর্মীদের বন্দি হওয়াও একটা পন্থা। বাইরের খাবার খেতে বাঘ এলে খাঁচায় থাকা বন দপ্তরের কর্মীরা সহজেই বাঘটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়তে পারবে। আর সেখানে নিরাপদে তাঁরা থাকতেও পারবেন।’
বাঘ ধরতে কেন এত সময় লাগছে? ওই কর্তার সহাস্য মন্তব্য, ‘ জঙ্গল বাঘের ঘর। সেখানে তার নাগাল পেতে গেলে তো সময় লাগবেই। জঙ্গলে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ে গুহা রয়েছে। সেখানেও জ়িনাত কিছু সময় লুকিয়ে থাকছে। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুচাপ বাড়ছে বনদপ্তরের কর্তাদের। দুই রাজ্যের বিশেষজ্ঞ টিম যৌথভাবে বাগে আনতে চাইছে জ়িনাতকে।
তথ্য সহায়তা: সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়