এই সময়, উদয়নারায়ণপুর, পুরশুড়া ও বসিরহাট: হস্টেল থেকে ১৬ দিনে বেপাত্তা তিন ছাত্র! আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল–আমিন মিশনের সদর দপ্তর, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এলাকার খলতপুরের হস্টেল থেকে ওই তিন ছাত্র নিখোঁজ হয়। তাদের মধ্যে রবিবার বিকেলে নিখোঁজ হয় দু’জন, তাদের বাড়ি হুগলি জেলার পুরশুড়ায়। এক জনের ফতেপুরে, অন্য জনের বড় দিঘরুই ঘাটে।
তার পরেই জানাজানি হয় যে, এর আগে ৬ ডিসেম্বর ওই একই হস্টেল থেকে এক ছাত্র বেপাত্তা হয়েছে। তার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের মাটিয়া এলাকার নলডিতে। তিন জনেই ক্লাস টেনের পড়ুয়া। আগামী ফেব্রুয়ারিতে তাদের মাধ্যমিক দেওয়ার কথা। প্রথমে ৬ তারিখ, তার পর রবিবার রাতে আল–আমিন মিশন কর্তৃপক্ষ উদয়নারায়ণপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তিন জন ছাত্রেরই বাড়ির লোকজন তাঁদের ছেলেদের হস্টেল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পিছনে আল–আমিন মিশনের কয়েক জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ এনেছেন।
যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আল–আমিন মিশন কর্তৃপক্ষ। পুরশুড়ার যে দুই কিশোর রবিবার নিখোঁজ হয়েছিল, সোমবার সন্ধ্যায় দমদম মেট্রো স্টেশনে তাদের পাওয়া যায় বলে সূত্রের খবর। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাদের দু’জনকে উদয়নারায়ণপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘কেন ওই ছাত্রেরা পালিয়ে গিয়েছিল, সেটা অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে।’ তবে সোমবার রাত পর্যন্ত বসিরহাটের নিখোঁঁজ ছাত্রের খোঁজ মেলেনি।
হস্টেলের নজরদারি এড়িয়ে কী ভাবে ছাত্রেরা পালিয়ে যেতে পারল, তা নিয়ে স্বভাবতই ছাত্রদের বাড়ির লোকজন প্রশ্ন তুলেছেন। অভিভাবকদের দাবি, এ ক্ষেত্রে নজরদারির অভাব ছিল। আল–আমিন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হস্টেল থেকে যে তিন জন পড়ুয়া পালিয়ে যায়, তারা শুধু একই ক্লাসের পড়ুয়া নয়, একে অন্যের বন্ধু। তবে তারা কেন পালিয়ে গেল, সেটা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।’
তাঁর বক্তব্য, ‘এক বন্ধু আগেই পালিয়ে গিয়েছিল বলেই হয়তো বাকি দু’জন হস্টেল ছেড়ে চলে যায়।’ রবিবার বিকেলে পালিয়ে যাওয়া দু’জনের হদিশ পাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে সোমবার রাতে নিশ্চিত হন আল–আমিন মিশন কর্তৃপক্ষ। এম নুরুল ইসলামের কথায়, ‘কী কারণে ওরা চলে গিয়েছিল, ওরা হস্টেলে ফিরে এলে সে ব্যাপারে আলাদা ভাবে ওদের সঙ্গে কথা বলব। তবে ছাত্রদের মানসিক ভাবে চনমনে রাখতে আমরা তাদের মানসিক পরিচর্যা করি। হতে পারে, এ ক্ষেত্রে কোনও ফাঁকফোকর থেকে গিয়েছিল।’
পুরশুড়ার যে দু’জন ছাত্র পালিয়ে গিয়েছিল, তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ, ছেলেদের উপর কয়েক জন স্যর অত্যাচার করতেন আর সেই অত্যাচার সহ্য করতে না–পেরেই তারা হস্টেল ছেড়ে পালিয়েছে। বসিরহাটের মাটিয়া এলাকার নলডির যে কিশোর এখনও নিখোঁজ, তার বাড়ির লোকজনের বক্তব্য, ছোট থেকেই ছেলে পড়াশোনায় ভালো। সে জন্যই তাকে আল–আমিন মিশনের হস্টেলে রাখা হয়েছিল।
দুর্গাপুজোর সময়ে সে শেষ বার বাড়িতে এসেছিল। তার বাবা বলছেন, ‘আমার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার আগে চিঠি লিখে গিয়েছে। সেই চিঠিতে ও জানিয়েছে, দুই শিক্ষক ওর উপর অত্যাচার করতেন।’ তবে আল–আমিন মিশন কর্তৃপক্ষ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, কোনও শিক্ষক অত্যাচার বা মারধর করেননি, পড়শোনা না–করলে যেমন বকুনি দেওয়া হয়, সেটাই হয়েছে।