বড় পরিকল্পনা নিয়েই মুর্শিদাবাদে ঘাঁটি গেড়েছিল দুই জঙ্গি। তাদের লক্ষ্য ছিল— স্থানীয় কিশোরদের মগজধোলাই করে আত্মঘাতী বোমারু (সুইসাইড বম্বার) তৈরি করা। তার পর তাদের দিয়েই জায়গায় জায়গায় গেরিলা কায়দায় নাশকতা ঘটানো। অসম, কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতার হওয়া আট জঙ্গিকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্যই মিলেছে বলে দাবি অসম পুলিশের এসটিএফ সূত্রে।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থেকে মিনারুল শেখ এবং মহম্মদ আব্বাস নামে দুই ব্যক্তিকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় অসম পুলিশ। ধৃতেরা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার-উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলেই খবর মিলেছিল পুলিশ সূত্রে। তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত দু’জনের দায়িত্ব ছিল প্রথমে এলাকার ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সি কয়েক জন ছেলেমেয়েকে চিহ্নিত করা। তার পর তাদের মাদ্রাসায় নিয়ে এসে মগজধোলাই। শুধু মুর্শিদাবাদই নয়, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, নদিয়া, উত্তর দিনাজপুর এবং আলিপুরদুয়ারেও কিশোর-কিশোরীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্তত ৩০ জন সুইসাইড বম্বারের দল তৈরি করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।
মিনারুল এবং আব্বাস ছাড়াও শাব আলি নামে এক ব্যক্তিকে কেরল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, তিনিও হরিহরপাড়ার কেদারতলায় থাকতেন একটা সময়ে। সেখানে তাঁর কাকা ও পিসির বাড়ি। মুর্শিদাবাদে থাকার সময়ে তার সঙ্গে মিনারুল ও আব্বাসের সখ্য তৈরি হয়ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকার কিশোর-কিশোরীদের প্রশিক্ষণ নিয়ে আনসার-উল্লাহের বঙ্গশাখার দুই নেতা আমির এবং জসিমদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকও করেছিল শাব। সেই মতোই ছোট ছোট মাদ্রাসায় এলইডি স্ক্রিন লাগিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের বক্তৃতাও শোনানো হত কিশোর-কিশোরীদের। মগজধোলাইয়ের পর অস্ত্রচালনা শেখানো, তাদের পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাঠানোরও পরিকল্পনা ছিল মিনারুল, আব্বাসদের।
অসম এসটিএফের ওই সূত্রের দাবি, উত্তর দিনাজপুর এবং শিলিগুড়ি করিডরের চারটি গ্রামও চিহ্নিত করেছিল জঙ্গিরা। সেখানে বিএসএফ আউটপোস্ট এবং জেলা পুলিশের দফতরে নাশকতার ছক ছিল তাদের। স্থানীয় মহিলাদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে দলে টেনে তাঁদের ঢাল করেই বিএসএফ-কে আটকানোর পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের একাংশের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের জেরা করে যা তথ্য উঠে এসেছে, তার রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেই মতো উপর মহল থেকে আরও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সীমান্ত রাজ্যগুলিতে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু জায়গায় এখনও কয়েক জন জঙ্গি আত্মগোপন করে রয়েছে বলে জানিয়ে রাজ্য পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অসম পুলিশের স্পেশ্যাল ডিজি হরমিত সিংহ বলেন, ‘‘সারা ভারত জুড়ে একাধিক জায়গায় বড়সড় নাশকতার ছক কষেছিল জঙ্গিরা। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় হামলার পরিকল্পনা ছিল ওদের। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের সাহায্য নিয়েই সব ছক কষা হয়েছিল। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে আসতে পারে।’’