সাত সকালে হঠাৎই পুরসভায় হাজির বিধায়ক। তাঁর অভিযোগ, কর্মসংস্কৃতি একেবারে গোল্লায় উঠেছে। যখন খুশি তখন অফিসে আসেন কর্মীরা। যার জেরে কাজের মান খারাপ হচ্ছে। কর সংগ্রহ, মিউটেশনের কাজকর্ম ঠিকমতো হচ্ছে না। এই কথা শুনে চটলেন পুরসভার চেয়ারম্যান। বিধায়ককে পাল্টা তোপ দেগে বললেন, পুরসভার কাজ দেখা ওনার এক্তিয়ারে পড়ে না। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সরগরম হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভা।
গত ২ মাস বেতন পাননি বলে অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেছিলেন হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মীরা। এর জেরে শহর ভরছিল জঞ্জালে। পরে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু আগামী মাসে কী হবে? বিধায়ক অসিত মজুমদারের বক্তব্য টাকার সংস্থানের জন্য তো পুরসভাকে কর আদায়ে জোর দিতে হবে। নিয়ম করে অফিসে এসে কাজ করতে হবে।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকালে হঠাৎই পুরসভায় হাজির হন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের পুর পারিষদ জয়দেব অধিকারী। সেখানে গিয়ে তিনি অভিযোগ তোলেন, পুরসভায় কর্মসংস্কৃতি ঠোক্কর খাচ্ছে।
বিধায়ক অভিযোগ করেন, পুরসভায় ওয়ার্ক কালচার নেই বলেই গত ৮ মাসে প্রায় ছয় কোটি টাকার কর আদায় বাকি পড়ে থেকেছে। কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে এ দিন নিজে রেজিস্ট্রার খাতা নিয়ে গিয়ে পুরসভার কর্মীদের সই করান, সময়ে অফিসে আসতে হব, নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে বলেও জানান বিধায়ক।
অসিত মজুমদার বলেন, ‘কালও এসেছি, আজও এলাম। কারণ, ওয়ার্ক কালচার ফেরাতে হবে। বারবার বলছি ১০টা ১৫-এর মধ্যে অফিস আসুন। অফিসে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মাথায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাই যদি দেরী করেন, কর্মীরা তো দেরী করবেনই। কর্মসংস্কৃতি না ফিরলে প্রতি মাসে দেড় কোটি টাকা বেতন দেওয়া সহজ নয়।’
যদিও বিধায়কের এই পুরসভা নিয়ে সক্রিয়তায় খুশি নন চেয়ারম্যান অমিত রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘বিধায়ক তো পুরসভা দেখেন না। পুরসভা দেখার দায়িত্ব আমাদের। একজ়িকিউটিভ অফিসার, ফিনান্স অফিসার, হেড ক্লার্ক আছেন বিষয়টি দেখার জন্য। আমি ওঁকে বলেছি, এটা ঠিক হচ্ছে না। কারণ, এটা স্বশাসিত সংস্থা। পুরসভার আধিকারিকরাই যা করার করবেন। আমরা যাঁরা জন প্রতিনিধি, আমরা তো ১০টা ৫টা ডিউটি করি না। আর কর্মীরা সময়েই আসেন। ক্যাজ়ুয়ালদের আলাদা ব্যাপার। আর ওয়ার্ক কালচারের সঙ্গে টাকা কালেকশনের কী সম্পর্ক? আমি বিধায়ককে বলেছি, খাতা যাঁদের দেখা কর্তব্য, তাঁরাই দেখবেন। এটা একেবারেই পুরসভার অভ্যন্তরীণ বিষয়।’
বিধায়কও তৃণমূলের, চেয়ারম্যানও তৃণমূলের। ফলে এই ঘটনাকে সামনে রেখে খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। হুগলি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউয়ের কটাক্ষ, তৃণমূলের আশীর্বাদে চুঁচুড়া পুরসভা এখন রঙ্গমঞ্চে পরিণত হয়েছে। এখানে সাধারণ মানুষ কোনও পরিষেবা পান না, শুধু কুস্তি দেখেন।