• খালপাড় দখল করে বেআইনি নির্মাণ চলছেই ভাঙড়ে
    এই সময় | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, ভাঙড়: কেষ্টপুর খালের দু'পাড়ের জবরদখল নিয়ে কিছু দিন আগে বিস্তর হইচই হয়েছিল প্রশাসনিক মহলে। খালের দু'পাড়ে তৈরি হওয়া বেআইনি দোকান, বাড়ি, বাজার সেই সময়ে ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল প্রশাসন। সম্প্রতি সরকারি জমির জবরদখলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    তবে এ সবের পরেও ভাঙড়ের বাগজোলা খালপাড়ে চলছে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ— কোনও বিরাম নেই। ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি খালপাড়ের জমি দখল, ওয়েটল্যান্ডে বেআইনি নির্মাণ, জলা ভরাটের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তবে তাতে লাভ বিশেষ হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য। যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘যেখানে যেখানে সরকারি জমি জবরদখলের অভিযোগ আসছে, সেখানেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’

    যে সব জায়গায় খালপাড় জখল করে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ, সেগুলোর প্রায় সবই ভাঙড়–২ নম্বর ব্লকের মধ্যে। ভাঙড়ের বাসিন্দা মনিরুল মোল্লার দাবি, ‘ভাঙড়–২ নম্বর ব্লকের বেওতা–২ গ্রাম পঞ্চায়েতের গাবতলা এলাকায় বাগজোলা খালপাড়ের জমি টিন ও বাঁশ দিয়ে ঘিরে দোকান তৈরি করেছেন স্থানীয়দের অনেকে। এলাকার কয়েক জন নেতা ও পুলিশের সঙ্গে যোগসাজস করে তাঁরা এই কাজ করছেন।’

    ওই জায়গাটি ইনফোসিসের ক্যাম্পাস থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। স্বভাবতই সেখানে জমির দাম আকাশছোঁয়া। অভিযোগ, সে কথা মাথায় রেখেই অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারি জমি দখল করে দোকানঘর তৈরি করেছেন।

    ভাঙড়ের বিজেপি নেতা অবনী মণ্ডলের বক্তব্য, ‘ভাঙড়–২ নম্বর ব্লকের পাঁচগাছিয়া এলাকায় সেচ দপ্তরের জায়গা দখল করে নিজের নামে করে নিয়েছেন ভাঙড়ে শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতা। ওই জায়গা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হচ্ছে, চলছে বিল্ডিং নির্মাণের কাজও।’ বিজেপি নেতার সংযোজন, ‘চন্দনেশ্বর থানা এলাকায় ঘটকপুকুর-সোনারপুর রোডের দু'পাশে পূর্ত দপ্তরের জায়গা দখল করে এবং খানা, ডোবা ভরাট করে একের পর এক দোকানঘর উঠছে। পুলিশ–প্রশাসনের কর্তাদের কোনও হেলদোল নেই।’

    চৌবাগা থেকে বাসন্তী রাজ্য সড়কের উত্তর পাড় বরাবর কুলটি পর্যন্ত পাশাপাশি গিয়েছে তিনটি খাল। কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য এই খালগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ভাঙড়ের সিপিএম নেতা তুষার ঘোষের অভিযোগ, ‘খালের দু'পাড় দখল করে ভোজেরহাট, পাগলাহাট, বড়ালি, নলমুড়ি, ঘটকপুকুর, গাবতলা, জামিরগাছি এলাকায় বেআইনি ভাবে বহু দোকান, বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে।’ সিপিএম নেতার দাবি, ‘এই বেআইনি কাজ রমরমিয়ে চলছে শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব ও প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মদতে।’

    স্থানীয়দের অনেকেরই অভিযোগ, সব চেয়ে খারাপ অবস্থা পোলেরহাট থানা এলাকার গাবতলা ও হাতিশালায়। সেখানে খালের উপর হিউম পাইপ ফেলে মাটি দিয়ে খাল বুজিয়ে রাস্তা বানিয়েছে জমি লুটেরারা। ইতিমধ্যেই ওই খালের উপর তৈরি হয়েছে বেশ কিছু হোটেল ও দোকান। হোটেলের যাবতীয় আনাজ ও খাবারের বর্জ্য খালের জলে প্রতিদিন ফেলার কারণে খাল এক রকম মজেই গিয়েছে ওই জায়গায়।

    আইএসএফের জেলা পরিষদ সদস্য রাইনুর হকের বক্তব্য, ‘ভাঙড়ে যে ভাবে খাল দখল হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে খাল সংস্কার করার উপায় থাকবে না। খালের উপর বেআইনি নির্মাণের ফলে মাটি কাটার মেশিন জলে নামানো যাবে না। ভাঙড়ের ওই সব খাল সংস্কার না–করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’

    গাবতলায় বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অভিযোগের তির ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য, তৃণমূলের শামিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে। তবে শামিমউদ্দিন বলছেন, ‘কারা দোকান করছেন, তা আমার জানা নেই। যাঁদের ঘরবাড়ির সমস্যা আছে, তাঁদের কেউ কেউ হয়তো খালপাড়ে ঝুপড়ি তৈরি করে থাকতে পারেন।’

    বেওতা–২ পঞ্চায়েতের প্রধান সাবির শেখ বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’ ভাঙড়–২ নম্বর ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা যদিও বলছেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পরেই বিএলআরও এবং সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাঁরা সবটা খতিয়ে দেখবেন।’ এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া পেতে ভাঙড়–২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূল নেতা খাইরুল ইসলামের মোবাইলে বার বার ফোন করা হলেও ফোন বেজে গিয়েছে, মেসেজেরও উত্তর পাওয়া যায়নি।

  • Link to this news (এই সময়)