এই সময়, মালদা: ‘গুজব ছড়াবেন না, গুজবে কান দেবেন না।’ পুলিশ-প্রশাসনের তরফে নাগাড়ে এমন প্রচার করা হয়। কিন্তু সে কথা কি সবার কানে পৌঁছয়? ‘ভাইরাল’ করা কিংবা হওয়ার বাসনায় সত্যি-মিথ্যে যাচাই করার পর্যন্ত সময় থাকে না অনেকের। সেই গুজব ছড়ানোর পরিণতি কী হতে পারে এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মালদা।
ইংরেজবাজার শহরের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলেছেন এক যুবক। মাঝেমধ্যে হালকা টালও খাচ্ছেন। সেইসময়ে কয়েকটি পথকুকুর তার পিছু নেয়। কিছুক্ষণ পরে তার সঙ্গে কুকুরদের সখ্যও হয়ে যায়। তখন আদর করে একটি কুকুরকে তিনি কোলে তুলে হাঁটতে থাকেন। যুবকের ‘অপরাধ’ বলতে এটুকুই!
আচমকা একটি মোটরবাইক ওই যুবকের পথ আটকে দাঁড়ায়। বাইকের দু'জন আরোহী নিজেদের ‘পশুপ্রেমী’ পরিচয় দিয়ে দাবি করেন, সেই যুবক নাকি রাতের অন্ধকারে শহরের রাস্তা থেকে কুকুর চুরি করছেন। আর সেই কুকুরের মাংস দিয়েই তৈরি হবে বিরিয়ানি। গোটা ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করা হয়। তারপরে সেই ভিডিয়ো ছেড়ে দেওয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ব্যস, হিন্দি সিনেমার দৌলতে লোকজন ‘কাউয়া বিরিয়ানির’ কথা আগেই শুনেছিলেন। এ বারে সেই রাতের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই গুজব ছড়াল— কুকুর বিরিয়ানি। লাইক, কমেন্ট, শেয়ারের ঘনঘটায় প্রত্যাশিত ভাবে সেই ভিডিয়ো ‘ভাইরালও’ হলো। রটে গেল, কোথাও কোথাও নাকি কুকুর বিরিয়ানি তৈরি হচ্ছে।
মালদায় বিভিন্ন মহলে উঠল সমালোচনার ঝড়। নেতিবাচক প্রভাব পড়ল খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তরাঁয়। মাথায় হাত পড়ল ব্যবসায়ীদের একাংশের। কিন্তু গুজবে রাশ টানা গেল না। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিয়ো শেয়ার হয়েই চলল।
মাস তিনেক আগের সেই ভিডিয়ো-গুজব ছড়ানোর অভিযোগে নড়েচড়ে বসে মালদার সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। গত তিন মাস ধরে একের পর এক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন সাইবার ক্রাইম থানার কর্তারা। পুলিশের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে পৌষের শীতেও ঘাম ছুটছে অনেকের।
সোমবার এমনই একজনকে ডাকা হয়েছিল সাইবার ক্রাইম থানায়। সেখান থেকে বেরিয়ে গায়ের জ্যাকেট খুলতে খুলতে ওই যুবক বললেন, ‘পুলিশের জেরায় জেরায় জেরবার হয়ে গেলাম! বড্ড ভুল করে ফেলেছি। ফেসবুকে ওই ভিডিয়ো দেখেই সেটাকে শেয়ার করে দিয়াছিলাম। তার জন্য যে এ ভাবে হয়রান হতে হবে, ভাবতেই পারিনি। গুজবে কান দিলে কী হয় তা বেশ মালুম হলো।’
ওই যুবকের সংযোজন, ‘পুলিশ নোটিস পাঠিয়ে বারবার ডেকে পাঠাচ্ছে। কোথায় থেকে ওই ভিডিয়োটি পেয়েছিলাম এবং কোনও কিছু যাচাই না করে কেন শেয়ার করলাম, সেই ব্যাপারেই পুলিশ জানতে চাইছিল। যাইহোক, খুব শিক্ষা হয়েছে। এই ভুল আর দ্বিতীয় বার করব না।’
মালদা সাইবার ক্রাইম থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল করে কুকুর বিরিয়ানির গুজব ছড়িয়েছিলেন ইংরেজবাজারের দু’জন। কিন্তু গুজব ছড়ানো আইনত অপরাধ। ওই ঘটনায় ব্যবসায়ীদের তরফে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। জেলার পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। এখনও পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজনকে ডাকা হবে।’
মালদা বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবী সন্টু মিয়াঁ বলেন, ‘গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে ২০০০ সালের আইটি অ্যাক্ট অনুযায়ী ৬৬ এ ধারায় মামলা দেওয়া হয়। যার সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।’ অতএব, সাধু সাবধান!