রাজ্যে জাল পাসপোর্ট চক্রের তদন্তে নেমে তদন্তকারী অফিসারদের হাতে এলও আরও একাধিক নথি। প্রচুর জাল পাসপোর্ট সহ চক্রের মূল পাণ্ডার বাড়ি থেকে উদ্ধার হল প্রচুর জাল আধার ও ভোটার কার্ডও ও সেগুলি তৈরির সামগ্রী। তদন্তকারীদের প্রথমিক অনুমান এই সব নাম ও ঠিকানা দিয়েই ভুয়ো আধার ও ভোটার কার্ড তৈরির পরিকল্পনা ছিল সমরেশের। যা হাতে আসার পর চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের।
গতকাল সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের মূল পাণ্ডা সমরেশ বিশ্বাসের বাড়ি থেকে প্রচুর ভুয়ো আধার, ভোটার কার্ড উদ্ধার করে তারা। উদ্ধার হয়েছে ভুয়ো কার্ড তৈরির ফর্ম্যাটও। মিলেছে একাধিক নাম ও ঠিকানার তালিকা। তদন্তকারীদের প্রথমিক অনুমান এই সব নাম ও ঠিকানা দিয়েই ভুয়ো আধার ও ভোটার কার্ড তৈরির পরিকল্পনা ছিল সমরেশের।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও অন্য যেকোনও পড়শি দেশ থেকে ভারতে এলে এদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হতে গেলে যে দুটি নথি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তা হল আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড। এই দুটি নথি থাকলেই ভারতীয় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যেতেই পারে। জানা গিয়েছে এই সমরেশ নাকি শুধু জাল পাসপোর্ট বানাত এমনটা নয়, সীমান্ত পার করানোর ব্যবসা দিয়েই হাতেখড়ি হয়েছিল তার। সীমান্ত পার করে এনে তাদের জন্য নথি তৈরির করে দেওয়ার নেটওয়ার্কও ছিল সমরেশের। এই সমরেশের বাড়ি থেকে একসঙ্গে এত বিশাল পরিমান ভুয়ো আধার ও ভোটার কার্ড উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
বাংলায় ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি রমারমা দিনের পর দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি যত উতপ্ত হচ্ছে ততই এদেশে অনুপ্রবেশের সংখ্যাও বাড়ছে। আর সেই সমস্ত বাংলাদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ভুয়ো পাসপোর্ট। আর এই কাজ করার জন্য বহু চক্র ইদানিং বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে বেশ কিছু ডকুমেন্ট লাগে। সেই সমস্ত ডকুমেন্ট কোথা থেকে আসছে সেই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরির জাল গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশের নজরে বহুদিন ধরেই এই বিষয়টা ছিল। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ তদন্তে নেমে, দেখে একাধিক স্তরে এই দুর্নীতি ছড়িয়ে রয়েছে। ধৃতদের মধ্যে পোস্ট অফিসের পিয়ন রয়েছে। এছাড়া পাসপোর্ট অফিসের কর্মীও এতে যুক্ত আছে বলে পুলিশ মনে করছে। বসিরহাটের বাংলাদেশ বর্ডার থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সম্পর্কে বাবা-ছেলে। পুলিশ জানতে পেরেছে, তাঁদের কাজ ছিল যাঁরা কাঁটাতার পেরিয়ে এদেশে আসছে, তাদের ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়া। বহু বছর ধরে এই কাজ তাঁরা করে আসছিলেন। আর তার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন বলে খবর।
গ্রেফতার হওয়া দীপঙ্করের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন দীপঙ্করের কাজ ছিল মূলত নথি তৈরি করা, যেমন ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন কাগজ, আঁধার কার্ড, ভোটার কার্ড এসব তৈরি করে সে পাঠিয়ে দিত চক্রের প্রধান সমরেশ বিশ্বাসকে।