• বাঘিনি ধরতে এবার খাঁচায় বন্দি বনকর্মী
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • পিনাকী ধোলে, বান্দোয়ান: বাঘিনি ধরতে খাঁচার ভিতর রাখা হয়েছিল মোষ। জঙ্গলেই খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছিল শুয়োর, ছাগল। মাটিতে ছড়িয়ে রাখা হয় মাংসের টুকরো। কিন্তু, সেসব খেলই না ‘মহারানি’। শুঁকেই চলে গেল। বনদপ্তরের পাতা ফাঁদে পা দিল না বাঘিনি জিনাত। তবে, জিনাতকে বাগে আনতে চেষ্টার কোনও কসুর করছে না বনদপ্তরের কর্মীরা। ঘুমপাড়ানি গুলিতে বাঘিনিকে কাবু করতে সোমবার রাতে একাধিক খাঁচার ভিতরে বন্দি থাকলেন বনকর্মীরা। 


    বনদপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, রবিবার ভোর থেকে সোমবার দিনভর রাইকার জঙ্গলেই রয়েছে বাঘিনি। দিনের বেলায় বেশি নড়াচড়া করছে না। রাজ্যের দক্ষিণ পূর্ব বনবিভাগের মুখ্য বনপাল(দক্ষিণ পশ্চিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত) বিদ্যুৎ সরকার বলেন, বাঘিনি রাইকার জঙ্গলেই রয়েছে। তার গলায় রেডিও কলার থেকে সেই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। মিলেছে পায়ের ছাপও। তাকে ধরতে যে ‘টোপ’ রাখা হয়েছিল, তার পাশ থেকেই ঘুরে গিয়েছে বাঘিনি। কিন্তু, ফাঁদে পা দেয়নি। 


    কিন্তু কেন? বনদপ্তরের অন্য এক আধিকারিকের জবাব, বাঘ কি আর মানুষের মতো দিনে তিনবেলা খাওয়া দাওয়া করে? গত বৃহস্পতিবার রাতেই ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে শিকার করেছে বাঘিনি। বনে শিকার করে খাওয়ার মতো জন্তুরও অভাব নেই। তাছাড়া এই বাঘিনি অত্যন্ত চালাক। সেই কারণেই হয়তো সে বনদপ্তরের টোপ গিলছে না। 


    বনদপ্তর সূত্রের খবর, বাঘ ধরতে রবিবার রাতে একাধিক খাঁচা পেতেছিল বনদপ্তর। সোমবার সেই খাঁচার সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সোমবার থেকে বাঘিনি ধরার ‘‹স্ট্র্যাটেজি’ পরিবর্তন করছে বনদপ্তর। এতদিন ধরে বাঘিনির পিছু ধাওয়া করে আসছিলেন বনকর্মীরা। তাতে খুব একটা সুবিধা হয়নি। তাই এবার আর পিছু ধাওয়া নয়। টোপ দিয়ে রাতে গুটিকয়েক বনকর্মী নিরাপদ স্থানে ঘুমপাড়ানি বন্দুক নিয়ে থাকবেন। বন আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পশুর খাঁচার কাছেই একাধিক পৃথক খাঁচা রাখা হচ্ছে। যার ভিতর থেকে বাঘের গতিবিধির উপর নজরদারি করা হবে। খাঁচায় থাকবেন বনকর্মীরা। বাঘকে বাগে পেলেই ট্র্যাঙ্কুলাইজ করা হবে। পাশাপাশি বনদপ্তরের তরফে আরও ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। 


    পুরুলিয়ার কংসবতী দক্ষিণ ডিভিশনের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, বাঘকে খাঁচাবন্দি করতে আমরা সবরকম চেষ্টা করছি। ওড়িশার সিমলিপালের বিশেষ টিম রয়েছে। গ্রামবাসীদের যাতে কোনও বিপদ না হয় তারজন্য আরও অতিরিক্ত প্রায় ২৫টা টিম জঙ্গল এলাকাগুলিতে নজরদারি চালাচ্ছে। 


    রাইকা পাহাড় লাগোয়া জঙ্গল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রাইকা পাহাড়ে গুহা রয়েছে। বাঘটি কোনওভাবে সেখানে ঢুকেও থাকতে পারে। তবে, সেইসব এলাকা শ্যাডো জোনের আওতায়। ঠিকমতো ইন্টারনেট পরিষেবা কাজ করছে না। ফলে তাকে খুঁজে পেতে দম ছুটছে বনকর্মীদের। সোমবার সকাল থেকেই বাঘিনির কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। 


    একটি মহলের তরফে দাবি করা হচ্ছিল, যে বাঘিনি সন্তান সম্ভবা। যদিও সেই গুজব উড়িয়ে দিয়েছে বনদপ্তর। এদিন মুখ্য বনপালের সঙ্গে রাইকার জঙ্গলে যান পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ, জেলার পুলিস সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁরা বলেন, বাঘিনি সুস্থ অবস্থাতেই রয়েছে। তাকে ওড়িশায় ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাসিন্দাদের নিরাপদে রাখতে সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাসিন্দারা যাতে অযথা বাড়ির বাইরে না বের হন, তারজন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)