সংবাদদাতা, বোলপুর: রীতি মেনে ব্রহ্ম উপাসনার মধ্য দিয়ে সোমবার এবারের পৌষ উৎসব শুরু হল। শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলায় ভিড় উপচে পড়ে। সঙ্গীত, মন্ত্র, বিশ্বভারতীর উপাচার্যের ভাষণই ছিল উপাসনার মূল বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, কর্মী, আধিকারিক অধ্যাপক সহ স্থানীয়দের একাংশ সাদা পোশাক পরে এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক বিধান রায় ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। উপাসনা শেষে সমবেত শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রভবন উপস্থিত হন রবীন্দ্র অনুরাগী ও দর্শনার্থীরা। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ব্যবহৃত চেয়ারে পুষ্পদানের মাধ্যমে প্রাথমিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সন্ধ্যায় মোমবাতির আলোকসজ্জায় ছাতিমতলা ও রবীন্দ্র ভবন সাজিয়ে তোলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
এবছর বিশ্বভারতীর উদ্যোগেই পৌষমেলা হচ্ছে। পূর্বপল্লির মাঠে মেলা জমে উঠেছে। প্রায় ১৮০০টি স্টল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। মেলা আয়োজনে প্রশাসনিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য ও জেলা প্রশাসন। তাই এদিন বিশ্বভারতীর আমন্ত্রণে ছাতিমতলায় ব্রহ্ম উপাসনায় উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক ও সভাধিপতি। উপাসনার পর বিশ্বভারতী উপাচার্য বিনয়কুমার সোরেনের পাশাপাশি জেলাশাসক ও জেলা সভাধিপতিও রবীন্দ্র ভবনে কবিগুরুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান। এরপর উপাচার্য পূর্বপল্লির মাঠে বিশ্বভারতীর প্রদর্শনী ঘুরে দেখান। বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের প্রদর্শনীতে শিক্ষা, শারীরশিক্ষা বিভাগ সহ শিক্ষাচর্চা, কলাভবন, রবীন্দ্র ভবন, চীনা ভবন, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেল প্রভৃতি বিভাগ প্রদর্শনী আয়োজন করে। যা দেখতে রবীন্দ্র অনুরাগীদের ভিড় জমে। প্রদর্শনী দেখার পর উপাচার্য, জেলাশাসক ও সভাধিপতি মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্টলের উদ্বোধন করেন।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বভারতী এখন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্গত। তাই আগত দর্শনার্থীদের কাছে অনুরোধ, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখুন। পরিবেশবিধি মেনে চলুন।
এই অনুষ্ঠান চলাকালীন উপাসনায় মন না দিয়ে ছবি, রিলস তৈরিতেই মত্ত থাকলেন দর্শকদের একাংশ। এনিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ প্রবীণ আশ্রমিক ও বাসিন্দারা। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তকেই তাঁরা দায়ী করেছেন।
ছাতিমতলায় উপাসনা শেষ হতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা পূর্বপল্লির মাঠে ভিড় জমান। সঙ্গীত ভবনের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী পারমিতা ভট্টাচার্য, ঋত্বিকা রায় বলেন, বিশ্বভারতীতে ভর্তি হওয়ার পর করোনা সহ নানা কারণে দু›বছর মেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। গতবার পূর্বপল্লির মাঠে মেলা ফিরলেও বিশ্বভারতীর সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। এবারই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তিম বর্ষ। তাই ফিরে যাওয়ার আগে চুটিয়ে আনন্দ করতে মেলায় চলে এসেছি। কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো ও নাগরদোলায় চাপা, এগুলোই মেলার জন্য প্ল্যান করেছি।