• লর্ড ডালহৌসি বার্মা থেকে কলকাতায় আনলেন আস্ত প্যাগোডা, তথ্যচিত্রে ফিরে দেখা সে ইতিহাস
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যে কোনও শহরে বেশ কিছু জায়গা মুক্তাঞ্চল হিসেবে রেখে দেওয়া একসময় অভ্যাস ছিল ইউরোপীয়দের। ভারত শাসনকালে ব্রিটিশরা কলকাতাতেও তার অন্যথা করেনি। এ শহরের ফুসফুস হিসেবে ধরে গঙ্গার ধারে জায়গা ছেড়ে রেখেছিল তারা। সেটিই আজ গড়ের মাঠ। সে মাঠের একটি অংশে ইডেন গার্ডেন। যা প্রায় দু’শো বছর আগে বিকশিত হয়েছিল মহীরূহে, বাহারি ফুলের গাছে। তখন বাগানের নাম ‘অকল্যান্ড সার্কাস গার্ডেন’। লর্ড ডালহৌসি সুদূর বর্মা থেকে আস্ত একটি প্যাগোডা তুলে এনে বসান বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে। এই প্যাগোডার জুড়ি বাংলায় নেই। তিলোত্তমার এই মুকুটটির সৌন্দর্য ও তার ইতিহাস ফের একবার মনে করিয়ে দিল একটি ছোট্ট তথ্যচিত্র।


    আজ যেখানে স্টেডিয়াম, তার পাশে রয়েছে একটি সবুজে ঘেরা বাগান। এক সময় গোটা এলাকাজুড়ে বাগানটি তৈরি করেছিলেন গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ড। ১৮৩৬ থেকে ছ’বছর তিনি ওই পদে বহাল ছিলেন। কলকাতায় থাকার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই বোন ফ্যানি ইডেন ও এমিলি ইডেন। দুই বোনের ব্যাপক উদ্যান প্রীতি। তবে শহরে তাঁদের মনের মতো কোনও বাগান নেই। জানা যায়, জানবাজারের রানি রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাস বাগান তৈরির জন্য গঙ্গার তীরের ওই জমি অকল্যান্ড সাহেবকে উপহার হিসেবে দিয়ে দিলেন। রাজচন্দ্র দাসের তৃতীয় কন্যাকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন অকল্যান্ডের দুই বোন। তারই নজরানা নাকি ওই বাগান। 


    সেখানে প্যাগোডা এল কীভাবে? সেই ইতিহাসই ফিরে দেখতে তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন রাজ্য সরকারের আর্কাইভ বিভাগের আধিকারিক সুমিত ঘোষ। ‘কলকাতায় বার্মার প্যাগোডা’ নামে সেই তথ্যচিত্রতে তিনি দেখিয়েছেন, বার্মার প্রোমের গভর্নর মং হননের স্ত্রী মা কিন ওই প্যাগোডাটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দেড় হাজার টাকা খরচ করে তিন মাস ধরে তা তৈরি হয়। লর্ড ডালহৌসি ১৮৫৬ সালে প্যাগোডাটি কলকাতায় নিয়ে আসেন। তা অকল্যান্ড সার্কাস গার্ডেনে পুনঃস্থাপন করতে আসেন বার্মার কারিগররা। ইডেন গার্ডেনে এনে বসাতে খরচ হয় ছ’হাজার টাকা। পরবর্তীকালে ১৯২২ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত মেরামতে খরচ হয় ২৫ হাজার ৮৯৯ টাকা।


    সুমিতবাবুর কথায়, ‘ইডেন গার্ডেনের পাশাপাশি প্যাগোডাটির অপরূপ কারুকাজ ও ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই জানা নেই। অথচ তার পরতে পরতে জড়িয়ে ইংরেজদের রুচি, বাঙালিদের বাগান বিলাস থেকে শুরু করে ঠাকুরবাড়ির ইতিহাসও। তথ্যচিত্রটিতে ফেরাতে চেয়েছি সেই জমকালো দিনগুলিও’। এদিকে এখন প্যাগোডার ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে চিন্তায় রাজ্য সরকার। প্যাগোডাটির যে অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেগুলি মেরামতের জন্য নিপুণ ও দক্ষ কারিগর চাই। সেই শিল্পী কোথা থেকে মিলবে, তা ভেবেই ঘুম ছুটেছে কর্তৃপক্ষের। 
  • Link to this news (বর্তমান)