শ্রীরামপুরে হেরিটেজ উৎসবের মধ্যেই বন্ধ হল ‘ঐতিহ্যবাহী’ ৩ নম্বর বাসরুট
বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: নিভে গেল শিবরাত্রির সলতেও। শতবর্ষের সীমানায় এসে থেমে গেল শ্রীরামপুরের তিন নম্বর বাসের চাকা। স্বাধীনতার অনেক আগে যাত্রা শুরু হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী এই রুটের। একসময় ৮০টির মতো বাস চলত। বেশ কিছু বছর ধরেই ধুঁকছিল রুটটি। করোনার পর চলত একটি মাত্র বাস। এবার বছর শেষের মুখে যখন উৎসবে মাতোয়ারা সকলে তখনই যাত্রা স্তব্ধ হয়ে গেল তিন নম্বরের। কার্যত পূর্ণচ্ছেদ পড়ল এক ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপথের।
কাকতালীয় হলেও এমন একটা সময় যাত্রা থামল বাসটির যখন নিজেদের ঐতিহ্য ফিরে দেখতে হেরিটেজ উৎসব হচ্ছে শ্রীরামপুরে। উৎসবের সেই বর্ণময় ছটার নীচে প্রায় নিঃশব্দে নিথর হল তিন নম্বর রুটের একমাত্র গাড়িটির চাকা। একাই এই রুট বাঁচানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সুদীপ গোস্বামী নামে এক বাস মালিক। রোজগার কম বলে কন্ডাক্টরের দায়িত্ব নিজেই পালন করছিলেন। করোনার পর এই রুটে কেবল তাঁর বাসটিই শুধুমাত্র চলত। যেত দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত। এবার সেটির চাকা আর গড়াবে না।
একদিকে সরকারি নিয়মের গেরো। অন্যদিকে অটো-টোটোর দাপট। সঙ্গে যাত্রীর অভাব। ফলে গত একমাস ধরেই অনিয়মিত ছিল তিন নম্বরের যাতায়াত। শেষপর্যন্ত সোমবার চিরতরে ইঞ্জিন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন সুদীপবাবু। তাঁর বয়স হয়েছে। দীর্ঘদিনের এই সফর আচমকা থামিয়ে দেওয়ার যন্ত্রণা রয়েছে মনে। শুধু বললেন, ‘বাস আর নামবে না। তিন নম্বর রুটকে বিদায় দিয়েছি।’ এই রুট বন্ধের অভিঘাত পড়েছে সর্বত্র। শ্রীরামপুরের বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক রঞ্জন প্রামাণিক বলেন, ‘১০০ বছরের সীমানায় এসে থেমে গেল বঙ্গের পরিবহণের একটি চলমান ঐতিহ্য। অনেকগুলি সমস্যা ছিল। সরকারকে প্রতিনিয়ত জানানো হয়েছে। শেষপর্যন্ত যা হওয়ার ছিল তাই হয়েছে। এখন আমাদের রুজি-রুটির ভরসা শ্রীরামপুর-নিউটাউন রুট।’ হুগলির জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক ও রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘ওই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখব।’ শ্রীরামপুরের হেরিটেজ উৎসবের উদ্যোক্তা ও শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল সন্তোষ সিং (পাপ্পু) বলেন, ‘ঐতিহ্য অটুট থাকলেই ভালো লাগে। এর বেশি কিছু বলার নেই।’ ইতিহাস বলে, শ্রীরামপুরে গণ পরিবহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ১৯২০ সালে। পুরোদস্তুর গণপরিবহণ ব্যবস্থা শুরু হয় ১৯২৬, মতান্তরে ১৯২৮ থেকে। শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে বাগবাজার পর্যন্ত বাস চলতে শুরু করে। সেটিই জনপ্রিয় তিন নম্বর রুট। গত ১০ বছর ধরে তা ধুঁকছিল। যে রুটে একসময় ৮০টি বাস চলত তা কমতে শুরু করে। ২০২২ সাল থেকে একটি বাস শুধু রুট বাঁচিয়ে রাখার দায় নিয়ে রাস্তায় চলছিল। বছরের শেষে এসে সেও থামল। আর এক লহমায় ঐতিহ্য হয়ে গেল ইতিহাস।