নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দেশের অন্যান্য মেগা সিটির তুলনায় কলকাতায় সবুজের পরিমাণ সব থেকে কম। কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে শহরের ‘ওপেন গ্রিন স্পেস’। সম্প্রতি ফরেস্ট সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (ইন্ডিয়া স্টেট অব ফরেস্ট রিপোর্ট, ২০২৩) রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
দেশের সাতটি বড় শহরে সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ফরেস্ট সার্ভে অব ইন্ডিয়া। সেখানে আমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, হায়দরাবাদ, কলকাতা এবং মুম্বই শহরে সবুজ কতটা রয়েছে, তার চিত্র উঠে এসেছে। ‘ফরেস্ট কভার’ বা সবুজের পরিমাণের নিরিখে বড় শহরগুলির মধ্যে সবার আগে রয়েছে দিল্লি। সেখানে ১৯৪.১৫ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে রয়েছে বনাঞ্চল। সব থেকে কম সবুজ রয়েছে কলকাতায়, মাত্র ২.০৬ বর্গ কিমি। এর মধ্যে গাছ-গাছালি, শহুরে বনাঞ্চলের পাশাপাশি ফাঁকা জায়গা, মাঠ, পুকুর, ঝিল, জলাশয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, ‘যেখানে গাছ বেশি থাকে, সেখানে গাছের কার্বন শোষণের ক্ষমতাও বেশি হয়। বড় গাছ বেশি পরিমাণে বাতাসের কার্বন শোষণ করতে পারে। কার্বনের মাত্রা মেট্রো সিটিগুলির বাতাসে অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া, বড় গাছ না থাকায় জীব বৈচিত্র্যও হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের বড় গাছ লাগানোয় বেশি জোর দিতে হবে।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘কলকাতা শহরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রচুর বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। সেগুলি না কেটে প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। গোটা বাইপাসজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর বড় গাছ লাগানোর সুযোগ রয়েছে। এই রিপোর্টের পর জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা দরকার।’
তবে কলকাতা পুরসভার ব্যাখ্যা, অন্যান্য মেট্রো শহরের তুলনায় কলকাতার আয়তন অনেক কম। তাই ‘ফরেস্ট কভার’ও কম। পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘কলকাতা শহরে খালি জমির পরিমাণ খুব কম। মাত্র চার শতাংশ মতো হবে। তার মধ্যে ২ শতাংশ গ্রিনারি ধরা হচ্ছে। এত কম সবুজ মোটেও কাঙ্খিত নয়। কিন্তু, কলকাতার আয়তন এবং বাস্তব পরিস্থিতিও বিচার করতে হবে।’ তাঁর যুক্তি, যে শহরগুলির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, সেগুলি পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শহর। সবুজের জায়গা রেখে নগরায়ন হয়েছে। কিন্তু কলকাতা পুরনো অপরিকল্পিত শহর। পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, সবুজ বাড়াতে ‘রোড সাইড গার্ডেন’ সহ একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
পুরকর্তাদের আরও বক্তব্য, যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে কলকাতা পুরসভা এলাকার অন্তর্গত জোকা অঞ্চলকে ধরা হয়নি। জোকা ধরলে কলকাতার আয়তন ২০৬ বর্গ কিলোমিটার হয়। তাঁদের যুক্তি, ‘ওপেন স্পেস’-এর নিরিখে শহরে সবুজের পরিমাণ নামমাত্র (২.০৬ বর্গ কিলোমিটার) ঠিকই। কিন্তু উপর থেকে অর্থাৎ ‘বার্ডস আই ভিউ’-তে কলকাতা শহরে সবুজের আচ্ছাদন (ক্যানোপি) বা ‘ফরেস্ট কভার’ অন্তত ১৫ থেকে ১৬ বর্গ কিলোমিটার হবে।