নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণগঞ্জ: এ-যেন ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল! কৃষ্ণগঞ্জের বিজেপির যুব নেতা লিঙ্কন বিশ্বাসের পরিবর্তনটা অনেকটা সুকুমার রায়ের ‘হযবরল’ গল্পের মতো। এমনকী তাঁর ব্যাপারে পাড়া প্রতিবেশীদের এখন একটাই কথা, ‘রুমাল তো আর রুমাল নেই, দিব্যি মোটা-সোটা একটা বিড়াল।’ কারণ সামান্য কম্বলের ব্যবসায়ী থেকে সাইবার প্রতারণা করে আজ সে কোটিপতি! সাড়ে চার কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগে কেরল পুলিসের জালে সে ধরা পড়েছে। গ্র্যাজুয়েট বিজেপি নেতার এই কীর্তিতে তাজ্জব গ্রামের বাসিন্দারা। বিগত এক-দেড় বছরে লিঙ্কনের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি নজর কাড়ছিল অনেকেরই। শুধু একটি ঘটনা নয়। এইবার সাইবার প্রতারণার পাঁচটি ঘটনার সঙ্গে লিঙ্কনের নাম জড়িয়ে আছে। এনসিআরবি পোর্টাল থেকে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিস। কৃষ্ণগঞ্জ থেকেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সে এই কর্মকাণ্ড সংঘটিত করেছে বলে জানা গিয়েছে।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, ‘কেরল পুলিস লিঙ্কন বিশ্বাসকে ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়েছে। এনসিআরবি পোর্টাল থেকে জানা গিয়েছে, একাধিক সাইবার প্রতারণার ঘটনায় তার নাম রয়েছে।’
কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েতের চৌগাছা এলাকায় চন্দননগর রায়পাড়ায় বাড়ি বিজেপির যুব নেতা লিঙ্কন বিশ্বাসের। সাইবার প্রতারণা করে কোটিপতি হলেও বাড়ির অবস্থা অবাক করার মতোই। কৃষ্ণনগর-কৃষ্ণগঞ্জের রাজ্য সড়ক ছেড়ে গ্রামের রাস্তায় ঢুকতেই কিছু বাড়ির পরেই পাঁচিল দিয়ে ঘেরা লিঙ্কনের ‘কুঁড়েঘর’। টিনের কাঁচা বাড়িতেই মা-বাবা, বউ ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকত সে। দরজার সামনে পোঁতা রয়েছে জাতীয় পতাকা। বাইরে থেকে একনজরে দেখলে অনেকেই ভাববে, পরিবারটি গরিব। কিন্তু চোখ কপালে উঠবে বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখলে। কারণ সেই টিনের ছাউনির কাঁচা বাড়ি সে মুড়ে ফেলেছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। টিনের ঘরেই লাগানো রয়েছে এসি। আবার ঘরের দরজা শালকাঠ দিয়ে বানানো। বর্তমানে সেই কাঁচা বাড়ি ছেড়ে পাকা বাড়িতে ওঠার পরিকল্পনা করছিল লিঙ্কন। সেই মতো বাড়ির সামনের জমিতেই কয়েকদিন আগে পাকা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে। এদিন তার বাড়িতে ছিলেন শ্বশুর সাধন রাজক। তিনি বলেন, ‘ওর মা-বাবা কৃষ্ণনগর গিয়েছে। আমি বাড়ি তৈরির কাজ দেখাশোনা করছি। জামাইয়ের কম্বলের ব্যবসা রয়েছে। যে কারণে ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছে, সেসব ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।’
গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এলাকার শান্তশিষ্ট ছেলে বলেই তার খ্যাতি রয়েছে। বছর কুড়ি আগে লিঙ্কনের পরিবার সেই এলাকায় এসেছিল। যদিও কোথা থেকে এসেছিল জানতে চাইলে গ্রামবাসীরা ইশারায় বুঝিয়ে দেন ওপার থেকে। কান পাতলে শোনা যায়, বিগত এক বছরে এলাকার বিভিন্ন মেলা, সম্মেলনে মোটা টাকার অনুদান দিয়েছে লিঙ্কন। শুধু তাই নয়, কয়েক মাস আগে গাড়িও কিনেছিল বলে গ্রামবাসীরা জানালেন।
কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি শুভদীপ সরকার বলেন, বিজেপি হল চোর চিটিংবাজেদের দল। অপরাধীদের নিয়ে দল করে ওরা। বিজেপির ওই যুব নেতা অপরাধের টাকা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছড়াত। নদীয়া জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র সিলভি সাহা বলেন, ‘গরিব থেকে বড়লোক হতেই সবাই বিজেপিতে ঝাঁপ মারে। আগেও এর প্রমাণ মিলেছে। অপরাধীদের টাকাতেই বিজেপি ফুলেফেঁপে ওঠে।
কৃষ্ণগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক আশিস বিশ্বাস বলেন, ছেলেটি যে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু কেউ ব্যক্তিগত স্তরে কী করছে তার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। এর পিছনে কোনও অভিসন্ধি আছে কি না, সে নিজেই প্রতারিত হয়েছে কি না, সেটা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়।