পিনাকী ধোলে, বান্দোয়ান: জঙ্গলের হিংস্র মেজাজ তার অহঙ্কার! গর্জন করে তেড়ে আসা তার অলঙ্কার। সেই কারণেই হয়তো বনদপ্তরের নানা লোভনীয় টোপ তার না পসন্দ। অতঃপর শিকার। প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার। এদিন বান্দোয়ানের রাহামদা গ্রাম লাগোয়া ভাঁড়ারিয়া পাহাড়ের জঙ্গল থেকে একটি আধখাওয়া ছাগল উদ্ধার হল। তারপর আরও তিনটি মৃত ছাগল উদ্ধার হয়। একটি ছাগল জঙ্গল থেকে গ্রামে ফিরে এসেছে রক্তাক্ত অবস্থায়। বনদপ্তরের আধিকারিকদের দাবি, এই কাজ বাঘিনী জিনাতেরই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাইকার অদূরেই ভাঁড়ারিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে ছাগল চরাতে গিয়েছিলেন রাহামদা গ্রামের বাসিন্দারা। রাতে স্থানীয় বাসিন্দা শুভরাম মুর্মু দেখেন, তাঁর প্রায় ছ’টি ছাগল ‘নিখোঁজ’। জঙ্গল থেকে ফেরেনি। আতঙ্ক নিয়েই এদিন সকালে ফের জঙ্গলে ছাগল চরাতে যান স্থানীয়রা। তখনই পাহাড়ের উপর আধখাওয়া ছাগল দেখতে পান মঙ্গলা টুডু ও রমণী টুডুরা। তাঁরা আধখাওয়া ছাগলটিকে গ্রামে নিয়ে আসেন। ফের জঙ্গলে গিয়ে তাঁদের নিজেদেরই একাধিক ছাগল খুঁজে পাননি। এরপর ওই জঙ্গল থেকে পরপর আরও তিনটি মৃত ছাগল উদ্ধার হয়। লাঠিতে বেঁধে ছাগলগুলি গ্রামে নিয়ে আসেন বাসিন্দারা। কিছুই বুঝতে বাকি থাকে না আর। মৃত ছাগলগুলির ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায় বনদপ্তরের কর্মীরা।
এদিন সকালেই গ্রামে ছাগল চরাতে গিয়েছিলেন রাহামদার বাসিন্দা কল্পনা বাস্কে। এদিন তাঁরও একাধিক ছাগল নিখোঁজ রয়েছে। একটি ছাগল মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। এদিন বিকালে তিনি বলেন, এখনও একাধিক ছাগল ঘরে ফেরেনি। কী হবে বুঝতে পারছি না। এদিন জঙ্গলে ছাগল নিয়ে গিয়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দা অনিল টুডু। তাঁর একটি ছাগল রক্তাক্ত অবস্থায় জঙ্গল থেকে গ্রামে ফিরে আসে। পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, এখনও পর্যন্ত পাঁচটি ছাগল মৃত ও পাঁচটি ছাগল জখম অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। একটি ছাগল নিখোঁজ রয়েছে। যদিও রাহামদার বাসিন্দাদের দাবি, এর থেকেও আরও অনেক বেশি ছাগল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ডিএফওর আশ্বাস, বাসিন্দাদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ছাগলের যা দাম আমরা মিটিয়ে দেব।
তবে এদিন ছাগল উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। ওড়িশার যে দল বাঘ ধরতে এসেছে, তাদের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাসিন্দারা। তাঁরা বলেন, এতদিন ধরে একটা বাঘকে ধরতে পারছে না? কী করছেন বড় বড় অফিসাররা। আমাদের দায়িত্ব দিক। আমরা বুঝে নেব। কীভাবে বাঘ ধরতে হয় দেখিয়ে দেব। তাঁদের ক্ষোভ, ছাগল মেরেছে, এবার তো মানুষ মারবে! বাঘের আতঙ্কে মঙ্গলবার রাতে কুঠার, বল্লম, তির-ধনুক নিয়ে রাত পাহারা দিতে দেখা যায় রাহামদার বাসিন্দাদের। তবে বাসিন্দারা যেভাবে ক্ষেপে গিয়েছেন তা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বনদপ্তরের আধিকারিকদের। উস্কে দিচ্ছে ছ’বছর আগের স্মৃতি। ২০১৮ সালের এপ্রিলে মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গল এলাকাতেও একইভাবে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। তবে বাঘ ধরতে ল্যাজেগোবরে হয়েছিল বনদপ্তর। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল লালগড়ের বাঘঘোরার জঙ্গল থেকে একটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আদিবাসীদের বল্লমের খোঁচায় মৃত্যু হয়েছিল পূর্ণবয়স্ক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। সেই স্মৃতি আর কোনওভাবেই যাতে ফিরে না আসে তাই সতর্ক বনদপ্তর। গ্রামে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। ডিএফও বলেন, বাসিন্দাদের অনুরোধ করব যাতে তাঁরা অযথা আতঙ্কিত না হন। তাঁদের সুরক্ষায় এলাকায় রাত পাহারা দেবেন বনকর্মীরা।