• আত্মঘাতী বাহিনী গড়ার ছক ছিল ধৃত আব্বাসের
    বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • অভিষেক পাল, বহরমপুর: হরিহরপাড়ার বারুইপাড়া হাটের মোড়ে ঘরভাড়া নিয়ে খারিজি মাদ্রাসা খুলেছিল ধৃত জঙ্গি আব্বাস আলি। এলাকার কিশোরদের সেখানে নিয়ে আসত সে। উদ্দেশ্য ছিল আত্মঘাতী বাহিনী তৈরি। আব্বাসের খারিজি মাদ্রাসায় সাত থেকে ১৩ বছরের নাবালকদের মগজধোলাই চলত। আরবি পড়ানোর নামে সেখানে পড়ুয়াদের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বিস্তার, আত্মঘাতী জঙ্গি হওয়ার মানসিক প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ দিত সে।


    ১৭ ডিসেম্বর ভোরে হরিহরপাড়া থেকে আব্বাস ও তার সহযোগী মিনারুল শেখকে গ্রেপ্তার করে আসাম রাইফেলস ও এসটিএফ। জঙ্গিযোগে হরিহরপাড়া এলাকায় পরপর দু’জন গ্রেপ্তার হওয়ার পরই জেলাজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। বারুইপাড়া এলাকার যেসব কিশোর ওই মাদ্রাসায় আরবি পড়তে যেত, তাদের পরিবারের লোকজনও বেশ উদ্বিগ্ন। যেভাবে তাদের মগজধোলাই করা হয়েছিল, তাতে ওই কিশোররা কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে-তা নিয়ে চিন্তিত তাদের অভিভাবকরা।


    ধৃত দুই জঙ্গিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আসাম এসটিএফ একাধিক তথ্য পেয়েছে। তদন্তকারী আধিকারিকরা আব্বাস ও মিনারুলের সঙ্গে নিষিদ্ধ জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) শীর্ষ জঙ্গিদের যোগ পেয়েছেন। এবিটির প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানির নির্দেশে বাংলাদেশ থেকে মুর্শিদাবাদে এসেছিল মহম্মদ শাদ রবি ওরফে সাব শেখ। সে এখানে এসেই স্লিপার সেল তৈরিতে মন দেয়। সেজন্য আব্বাসকে দিয়ে খারিজি মাদ্রাসা খোলায়। ওই মাদ্রাসায় শাদের ভালোই যাতায়াত ছিল। বাংলাদেশ থেকে সমস্ত নির্দেশই শাদের মাধ্যমে সেখানে আসত। স্থানীয় কিশোরদের আত্মঘাতী বম্বার হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার প্রশিক্ষণ শুরুর নির্দেশও এসেছিল। এমনকী, শাদ ও আব্বাসের মোবাইল ঘেঁটে শক্তিশালী বোমা ও গ্রেনেড তৈরির ভিডিও পেয়েছেন তদন্তকারীরা।


    ধৃত শাদ রবি নওদার দুর্লভপুরের দক্ষিণপাড়ায় তৃণমূলের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার আত্মীয়ের বাড়িতে থাকত। ওই ব্যক্তির সহযোগিতায় ভোটার তালিকায় নাম তুলেছিল সে। ভোটার লিস্টে তার নাম মহম্মদ সাব শেখ। তারপর হরিহরপাড়ায় নিজের ভোটার কার্ডটি স্থানান্তরিত  করে সে। হরিহরপাড়ার ঠিকানাতেই এই বাংলাদেশি জঙ্গি একটি আধার কার্ড তৈরি করিয়ে নেয়। আধার কার্ড হয়ে যেতেই সে পাসপোর্ট তৈরি করে। কীভাবে তার ভোটার কার্ড তৈরি হয়েছিল-সেবিষয়ে জেলা প্রশাসন তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে।


    ২০২১ সাল নাগাদ ভোটার লিস্টে নাম তুলে নেয় ওই জঙ্গি। কাদের মাধ্যমে সে ভোটার কার্ড তৈরি করেছিল-তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের আগের ভোটার তালিকায় তার নাম আছে কিনা-সেটাও খতিয়ে দেখছে ব্লক প্রশাসন। এজন্য জেলা প্রশাসনের তরফে বিডিওকে ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদনের ফর্ম খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


    জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, সেসময় অফলাইনে আবেদন জমা পড়ত। আমরা সেই আবেদন খতিয়ে দেখছি। নওদা ও হরিহরপাড়া-দু’টি জায়গাতেই ভোটার তালিকায় ওর নাম রয়েছে। এখন যে কোনও একটি জায়গার নাম বাদ যাবে। পরবর্তীতে যদি তদন্তকারী সংস্থা অভিযুক্তের নামে রিপোর্ট দেয়, তাহলে আমরা সেই ভিত্তিতে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে পারব।
  • Link to this news (বর্তমান)