• মহিষাদলে এবার গান্ধীমেলা সাতদিনের, শুরু আজ
    বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • শ্যামল সেন, হলদিয়া: আজ থেকে ৮০ বছর আগে এক বড়দিনের বিকেলে মহিষাদলে এসে পৌঁছে ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। ১৯৪৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর। সোদপুর গান্ধী আশ্রমে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে গঙ্গায় স্টিমারে চেপে প্রথমে যান ডায়মন্ডহারবারে একটি মিটিংয়ে। তারপর মিটিং শেষ করে নদীপথে আসেন গেঁওখালি। হিজলি টাইডাল ক্যানেলে নৌকোয় চেপে পৌঁছন মহিষাদলের এক্তারপুর শিশুসদনে। সঙ্গে ছিলেন সুশীলা নায়ার, আভা গান্ধী প্রমুখ। ওই শিশুসদনের পাশেই গান্ধীজির থাকার জন্য তৈরি হয়েছিল খড়ের কুটির। সেখানেই পাঁচদিন ছিলেন গান্ধীজি। তখন তাঁর বয়স ৭৬ বছর। স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি ঘটনার তদন্ত করতে এবং একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এসেছিলেন তিনি। গান্ধীজির আগমনের স্মৃতিতে স্বাধীনতার পর থেকে সাত দশকের বেশি সময় ধরে গান্ধী মেলার আয়োজন হচ্ছে মহিষাদলে। 


    প্রতি বছর বড়দিনেই শুরু হয় মেলা। গান্ধীজি মহিষাদলে ছিলেন ২৫ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিন। সেই দিনগুলি স্মরণীয় রাখতে এতদিন পাঁচ দিনের গান্ধী মেলার আয়োজন করা হতো। এবছর থেকে মেলা হচ্ছে সাতদিনের। মহিষাদলে গান্ধী মেলার আয়োজন করে গান্ধী মেলা উদযাপন সমিতি। সমিতির সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বলেন, স্থানীয়দের দাবি মেনে এবার মেলা ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। মেলায় গান্ধীজির আদর্শ ও জীবনবোধ চর্চার পাশাপাশি স্থানীয় লোকসংস্কৃতির বিকাশে জোর দেওয়া হয়েছে। এজন্য মেলার শুরুতেই হচ্ছে গয়নাবড়ি তৈরি ও আলপনা আঁকা প্রতিযোগিতা। স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে গান্ধীজির জীবন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা নিয়ে চর্চা বাড়াতে প্রতিদিনই বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। 


    মেলার সাধারণ সম্পাদক প্রণব দাসবায়েন, কার্যকরী সভাপতি মাখনচন্দ্র ঘোড়ই বলেন, গান্ধী মেলার মূল উদ্দেশ্য গান্ধী আদর্শের চর্চা করা। এই উপলক্ষ্যে গান্ধী দর্শনের উপর আলোচনা, কৃষি, স্বাস্থ্য, সমবায় ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ে সেমিনার, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও পড়ুয়াদের কুইজের আয়েজন করা হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় গয়না বড়ি তৈরি ও আলপনা আঁকা প্রতিযোগিতা হবে। বিকেলে শোভাযাত্রা সহকারে উদ্বোধন হবে মেলার। গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধীজি এই দু›টি বিষয়ে ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর স্কুল পড়ুয়াদের বক্তৃতা প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এছাড়া গান্ধীজির অহিংস সত্যাগ্রহ নীতি, গান্ধীজি ও রবীন্দ্রনাথ, স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজির ভূমিকা নিয়ে তিনদিন পরপর বড়দের আলোচনা রয়েছে। প্রতিদিন মেলায় বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাউলের আয়োজন রয়েছে।


    গান্ধী মেলার অন্যতম উপদেষ্টা ইতিহাস গবেষক হরিপদ মাইতি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে মেলা শুরু হলেও মাঝপথে দু’বার বন্ধ হয়েছে। গান্ধীজি দু’টি ঘটনার তদন্ত করতে মহিষাদলে এসেছিলেন। গান্ধীজি যখন হিজলি ক্যানেল ধরে আসছিলেন, পাড়ের দু’পাশে ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় জয়ধ্বনি দিতে বারণ করা হয়েছিল। গান্ধীজি সেই খড়ের কুটির এখন আর নেই। সেখানে তৈরি হয়েছে পাকা কুটির। সম্প্রতি জনশিক্ষা দপ্তর ও বিধায়কের উদ্যোগে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শিশুসদনের পরিকাঠামো নতুন করে তৈরি হয়েছে, বসেছে সাবমার্সিবল পাম্প।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)