নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: লস্কর-ই-তোইবার কয়েকজন হ্যান্ডলারকে ‘রিসিভ’ করতেই ক্যানিংয়ে ঘাঁটি গেড়েছিল কাশ্মীরি জঙ্গি জাভেদ আহমেদ মুন্সি। খুলনা ও বাগেরহাটের আশ্রয়স্থল থেকে সুন্দরবনের অপেক্ষাকৃত অরক্ষিত জলপথ ধরে ওই হ্যান্ডলারদের একজনকে ‘নিরাপদে’ ভারতে নিয়ে আসার দায়িত্ব বর্তেছিল বর্ষীয়ান জাভেদের উপর। গোয়েন্দারা বলছেন, পাকিস্তানের এই হ্যান্ডলারদের কাশ্মীর যাত্রা নির্বিঘ্ন করার নির্দেশ এসেছিল জাভেদের কাছে।
কারা দিয়েছিল সেই নির্দেশ? সূত্রের খবর, শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা তো বটেই, বাংলাদেশের দক্ষিণাংশের খুলনা, বাগেরহাটের সুন্দরবন অংশ এখন জঙ্গিদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। লস্কর, জয়েশ-ই-মহম্মদ, জেএমবি, হিজবুত তাহরির, আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি) মিলেমিশে একাকার। পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা নীতিতে ব্যাপক ছাড় দেওয়ার পর থেকে সে দেশের শীর্ষ জঙ্গি নেতা, গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই’এর এজেন্ট আর ফিল্ড অফিসাররা একের পর এক ভিড় করছে বাংলাদেশে। কাশ্মীর এবং পশ্চিম ভারতের সীমান্তে কড়া নজরদারি চলছে। গোয়েন্দারা বলছেন, পাকিস্তান সহ এই উপমহাদেশের বিভিন্ন জেহাদি ও জঙ্গি সংগঠনের মঞ্চ অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফফরাবাদের ‘ইউনাইটেড জেহাদ কাউন্সিল’এর কয়েকজন মাথা সে কারণেই এই মুহূর্তে খুলনা-বাগেরহাটে গা-ঢাকা দিয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে লস্করের ‘সিদ্দিকি’, ‘রিজওয়ান’, জয়েশের ‘আব্বাস গনি’র মতো কুখ্যাতরা। ভারতে ‘অনুপ্রবেশ’এর অপেক্ষায় রয়েছে তারা। তাদেরই একজনকে ভারতীয় সুন্দরবনের অংশের জল সীমানা দিয়ে চলতি সপ্তাহে ক্যানিংয়ে নিয়ে আসার কথা ছিল জাভেদের। কাশ্মীর পুলিস বলছে, এর আগেও একইভাবে বাংলাদেশে গিয়েছিল এবং লোক নিয়ে এসেছিল এই কাশ্মীরি জঙ্গি।
এপারের গোয়েন্দারা বলছেন, ইউনুস সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানকে আঁকড়ে ধরার সব রকম প্রয়াস শুরু করেছে। তারই সাম্প্রতিকতম নিদর্শন হল, ভিসা নীতিতে পরিবর্তন। গত ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের বিদেশ মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশের ভিসার জন্য আবেদন পর্বে পাকিস্তানি নাগরিকদের তাদের ‘সিকিউরিটি সার্ভিসেস ডিভিশন’ থেকে যে ‘নো-অবজেকশন’ সার্টিফিকেট নেওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল, তার আর প্রয়োজন নেই। পাকিস্তানের যে কোনও নাগরিক এখন অবলীলায় আসতে পারবে বাংলাদেশে। গোয়েন্দা সূত্রটি জানিয়েছে, এই নির্দেশ জারি হওয়ার পরই লস্কর, জয়েশ সহ ভারত বিরোধী চক্র বাংলাদেশকে ‘মুক্তাঞ্চল’ বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। এমনকী ভারতীয় জাল নোট কারবারকে ‘অক্সিজেন’ জোগানো এবং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যে সব পাক দূতাবাস কর্মীকে দেশে ফিরিয়ে দিয়েছিল হাসিনা সরকার, তাদের মধ্যে কমপক্ষে তিনজন ঢাকায় ফিরে এসেছে এখবরও মিলেছে। জাভেদ মুন্সির ক্যানিংয়ে আশ্রয় নেওয়া এবং ভারত বিরোধী জঙ্গি নেতাদের জন্য সেফ প্যাসেজ এবং ট্রানজিট ক্যাম্প বানানোর পরিকল্পনা ভারত বিরোধী সেই চক্রেরই কাজ বলে জেনেছে কাশ্মীর পুলিস।