• রোগী ভর্তি না থাকলে ঠাঁই নেই রাত্রিনিবাসে 
    বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শীতের রাতে একটা কম্বল, মশারি আর মাফলার। এইটুকুই সম্বল। মাথার উপর ছাদ বলতে খোলা আকাশ। এন আর এস হাসপাতালে এভাবেই দিনের পর দিন কাটে আতাবুল, রিজওয়ানদের। তাঁরা কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ জোগাড়ের কাজ করেন। জেলা থেকে তাঁরা কলকাতায় আসেন ডাক্তার দেখাতে। তাঁদের হোটেলে থাকার টাকা নেই, আবার নিয়মিত বাড়ি যাওয়ার মতো সামর্থ্যও নেই। অগত্যা হাসপাতালে  খোলা আকাশের নীচেই থেকে যেতে হয় শ’য়ে শ’য়ে মানুষকে।


    এন আর এস হাসপাতালে রোগীর পরিজনদের জন্য রাত্রিনিবাস রয়েছে। এক রাতের জন্য ৭৫ টাকা দিয়ে সেখানে থাকা যায়। কিন্তু, রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হলে সেখানে থাকতে পারেন না পরিজনরা। মুর্শিদাবাদ থেকে এন আর এসে স্ত্রীর কেমোথেরাপির জন্য এসেছিলেন রিজওয়ান শেখ। তাঁরও বয়স হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে প্লাস্টিক, চাদর পেতে বিছানা করেছেন তিনি। বলছিলেন, ‘মশারি টাঙিয়ে নিয়ে একটা কম্বল চাপা দেব। আজ থেকে স্ত্রীর কেমো শুরু হল। ওকে তো ভর্তি করা যায়নি। তাই রাত্রিনিবাসে জায়গা হয়নি। টানা পাঁচদিন কেমো চলবে। আমাদের পক্ষে যাতায়াত করা সম্ভব নয়।’ জোগাড়ের কাজ করেন রিজওয়ান। তাঁরও বয়স হয়েছে। বয়সের ভারে নতুন করে জুড়ে বসেছে পায়ের ব্যথা। তিনি বলছিলেন, ‘এখন খুব বেশি কাজ করতে পারি না। কিন্তু কাজ না করলে সংসার যে চলে না! বুড়ো বয়সে শীতের রাতে হাসপাতাল চত্বরে থাকতে কষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু উপায় নেই। বাড়ি ফিরতে চাইলেও পারব না। রাতে যদি স্ত্রীর কিছু দরকার পড়ে।’ রিজওয়ানের মতো এমন অসংখ্য মানুষ রোগীদের নিয়ে রাতের পর রাত কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নীচে।


    রিজওয়ানের পাশেই শ্বশুরকে নিয়ে রঘুনাথগঞ্জ থেকে এসেছেন আতাবুল শেখ। তিনি বলছিলেন, ‘ফের সামনের মাসে আসতে হবে। আমরা অত দূর থেকে কলকাতায় এলেও প্রথম দিন ডাক্তারের ডেট পাওয়া গেল না। কিন্তু না দেখিয়ে কীভাবে বাড়ি ফিরব? তাই ডাক্তার দেখিয়ে, সব টেস্ট করে ফের ডাক্তারের ডেট নিয়ে ফিরতে হবে। এতদিন থাকব কোথায়?’ পেশায় রাজমিস্ত্রি আতাবুলের হোটেলে থাকার সঙ্গতি নেই। তাই বৃদ্ধ শ্বশুরকে নিয়ে খোলা আকাশের নীচেই থাকছেন তিনি। সোমবার দুপুরে এন আর এস-এর রাত্রি নিবাসে গিয়ে দেখা গেল, সেখানেও বেড খালি নেই। তবে ৭৫ টাকার বিনিময়ে মেঝেতে মাদুর পেতে শোয়ার ব্যবস্থা করে দেয় কর্তৃপক্ষ। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)