• যাদবপুরের গবেষক থেকে দারোগা! উলটপুরাণের সাক্ষী কলকাতা পুলিস
    বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সুজিত ভৌমিক, কলকাতা : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার গবেষক থেকে কলকাতা পুলিসের দারোগা! দুর্মূল্যের এই চাকরির বাজারে এ হেন উলটপুরাণের সাক্ষী কলকাতা পুলিস। ইউজিসি-নেট উত্তীর্ণ যাদবপুরের গবেষক মিন্টু মল্লিক সম্প্রতি সাব ইনসপেক্টর হিসেবে কলকাতার বেলেঘাটা থানায় যোগ দিয়েছেন। 


    নাম কা ওয়াস্তে গবেষণা নয়। কলকাতা পুলিসের এই দারোগার পকেটে পেটেন্ট নেওয়ার মতো গবেষণাপত্র রয়েছে। আছে যাদবপুর থেকে পদার্থবিদ্যার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ডিসট্যান্সে রসায়নের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও। ২০১৬ সালে নেট উত্তীর্ণ হওয়ার পর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা জয়তী দাসের অধীনে তিনি গবেষণা শুরু করেছিলেন। মাঝে করোনার জন্য ব্যাহত হয়েছিল গবেষণার কাজ। এই গবেষণার ফসল, গ্রাফিন অক্সাইড সম্পর্কিত ইথিলিন গ্যাস সেন্সার স্কেল। 


    দৈনন্দিন জীবনে ইথিলিন গ্যাস সেন্সার স্কেলের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সদ্য কলকাতা পুলিসে যোগ দেওয়া এই দারোগার কথায়, ‘আমাদের দেশে ফি বছর আমদানি-রপ্তানির সময় প্রচুর ফল পচে যায়। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে এই স্কেল। ফল রপ্তানির সময় লরিতে স্কেল লাগানো থাকলে,  যাত্রাপথে ফল কতটা পাকল তা জানা যাবে। ফলে পচন ধারার আগে ব্যবস্থা নিতে পারবেন ব্যবসায়ী।’ নেট উত্তীর্ন হওয়ার পরও কলেজে শিক্ষকতার চাকরি না জোটায় কিছুটা হতাশ হয়েই ২০২৩ সালে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার পর কলকাতা পুলিসের এসআই পদের নিয়োগ পরীক্ষায় বসেন মিন্টু। আসে সাফল্য। ট্রেনিংয়ের সময় মিন্টুর শিক্ষাগত যোগ্যতা শুনে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছিলেন প্রশিক্ষকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশিক্ষকের কথায়, ‘একজন দারোগার এমন শিক্ষাগত যোগ্যতা সাম্প্রতিক অতীতে আমাদের নজরে আসেনি। ফলে অস্বস্তি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।’


    উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার কমলাবাসের ভূমিপুত্র মিন্টু। বাবা সিআরফিএফ থেকে অবসর নিয়েছেন। চাকদহ কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় সাম্মানিক স্নাতক মিন্টুবাবু। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ। ২০১৬ সালে ইউজিসি পরিচালিত নেট উত্তীর্ণ হন। গবেষণা শেষে সোজা কলকাতা পুলিসে। সদ্য কাজে যোগ দেওয়া এই দারোগার কলকাতা শহরে এখনও নিজস্ব বাসস্থান নেই। তাই বেলেঘাটা থানার একটি রেস্ট রুম অস্থায়ী ঠিকানা। গবেষণা ছেড়ে পুরো বিপরীত মেরুর চাকরিতে আসা মিন্টু মল্লিক কথায় কথায় জানালেন, ‘আর পাঁচটার থেকে আলাদা হলেও পুলিসের চাকরি তাঁর ভালোই লাগছে।’
  • Link to this news (বর্তমান)