এই সময়: যে ছবি কখনও আঁকেননি লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, সেই ছবি তিনি আঁকলে কেমন হতো — সেটা চোখের পলকে এঁকে দিতে পারে এই প্রযুক্তি। রবি ঠাকুরের ছন্দের অনুকরণ করে কবিতা? তাও নাকি জলভাত ‘ওর’ কাছে। বেনারসি শাড়ি পরলে কেমন দেখতে লাগবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে?
তার জন্যে ব্যস্ত অভিনেত্রীকে শুটিং থামিয়ে শাড়ি পরানোর ঝামেলাও নেই! আপনি শুধু কষ্ট করে শাড়িটা আর নায়িকার পোজ় কেমন হবে সেটা ঠিক করে দিন। বাকিটা ওই প্রযুক্তিই করে দেবে। শুধু এই সব ‘ছেলেমানুষি’ নয়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কাজে আসতে চলেছে ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।
সারা পৃথিবী যে পরিবেশ–বান্ধব শক্তির উৎপাদন নিয়ে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেই কাজে আগামী দিনে মানুষের সবচেয়ে বড় সহায় হতে চলেছে এই প্রযুক্তিই। মঙ্গলবার সায়েন্স সিটিতে ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশন এবং নিউ বেঙ্গল কনসাল্টিংয়ের (এনবিএস) উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এমন সম্ভাবনার কথাই উঠে এল।
প্রয়োজন শুধু নির্দিষ্ট কিছু ডেটার। কোনও একটা জায়গায় সারা বছর কতদিন কেমন রোদ থাকে অথবা বাতাসের গতি কেমন থাকে — শুধু এই দু’টি তথ্য পেলেই এআই হিসেব কষে বলে দিতে পারবে ওই জায়গায় সোলার প্যানেল বসালে কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কী ভাবে অপ্রচলিত ওই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ করলে উৎপাদনে ঘাটতি সবচেয়ে কম থাকবে — সেটাও হিসেব কষে বলে দেবে এআই প্রযুক্তি।
এ দিনের সেমিনার পরিচালনা করেন এনবিএস–এর প্রতিষ্ঠাতা দেবাশিস সেন। উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী। ছিলেন, মাইক্রোসফটের ইন্ডাস্ট্রি সলিউশনস আর্কিটেক্ট সুচন্দ্রা সেনগুপ্ত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কমল সরকার, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজ়নেস ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক বিনয়কুমার চৌধুরী, ইউএসএ–র রাইস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপিকা সোহিনী ভট্টাচার্য এবং অন্য আরও বিশিষ্টরা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০০ ছাত্র-ছাত্রী।
আলোচনায় উঠে আসে, ইতিমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক (এএনএন), সাপোর্ট ভেক্টর মেশিনস (এসভিএম), জেনেটিক অ্যালগরিদম (জিএ), রেডিয়াল–বেসিস ফাংশন নিউরাল নেটওয়ার্ক (আরবিএফএনএন), সিজ়নাল অটোরিগ্রেসিভ ইন্টিগ্রেটেড মুভিং অ্যাভারেজের (সারিমা) মতো এআই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পরিবেশ–বান্ধব শক্তি উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে।
ভারতেও বেশির ভাগ জায়গায় চড়া রোদ, বাতাসের গতি এবং অন্য পারিপার্শ্বিক কারণ বিকল্প শক্তি উৎপাদনের পথ অনেকটাই প্রশস্ত করে রেখেছে। পরিবেশবান্ধব বিকল্প শক্তির ভরসায় জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি নির্ভরশীলতা কমানোয় জোর দেন বিশেষজ্ঞরা। আর বেশি করে পরীক্ষার কথাও বলেন। পরিবেশ–বান্ধব শক্তি সম্পর্কে মানুষজনকে সচেতন করার উপরেও জোর দেন তাঁরা।