• ফরেন্সিক রিপোর্ট জমা পড়ার পরেই প্রশ্ন উঠল সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে
    এই সময় | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: অগস্ট মাসের ৯ তারিখ আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ঘটে। তার ঠিক এক মাসের মাথায় ১১ সেপ্টেম্বর অকুস্থল সংক্রান্ত ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পায় সিবিআই। সেখানে সেমিনার রুম নিয়ে একাধিক সন্দেহের ইঙ্গিত দেওয়া হয়। অথচ, তরুণী চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের মামলায় প্রথম চার্জশিটে তার উল্লেখ না করায় এ বার প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সংস্থার ভূমিকা।

    এমনকী, ওই মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করতে না পারায় জামিন পেয়ে যান অভিযুক্ত আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। প্রশ্ন উঠেছে, কী এমন ঘটনা ঘটল যেখানে অভিযুক্তদের জামিনের ক্ষেত্রে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারল না সিবিআই?

    জুনিয়র চিকিৎসকরা জানতে চান, ‘সিএফএসএল রিপোর্ট উল্লেখ করে কেন চার্জশিট পেশ করা হলো না? মামলার ট্রায়ালও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে আসল তথ্য সামনে না আসায় সেই ট্রায়ালের ভবিষ্যৎ কী হবে?’ এর আগে ঘটনাস্থল হিসেবে সেমিনার রুমের কথা উল্লেখ করা হলেও নাগরিক সমাজের একটা বৃহত্তর অংশ তা মানতে রাজি হয়নি। বিশেষ করে সেমিনার রুম লাগোয়া চিকিৎসকদের রেস্ট রুমে ঘটনার পরের দিনই মেরামতের কাজ শুরু হওয়ায় প্রবল বিতর্ক দেখা দেয়।

    আরজি করের খুন–ধর্ষণের মামলায় মূল অভিযুক্ত কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে গত ৭ অক্টোবর প্রথম চার্জশিট পেশ করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। পরে অভিযুক্ত হিসেবে ওই মামলায় সন্দীপ এবং অভিজিৎ–কে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে সওয়াল–জবাবে বিস্ফোরক দাবি করলেও বাস্তবে ৯০ দিনের মধ্যে দু’জনের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটই পেশ করতে পারেনি গোয়েন্দারা। সে কারণে গত ১৩ ডিসেম্বর জামিন পেয়ে যান সঞ্জয়–অভিজিৎ। অথচ এর তিনমাস আগেই সেপ্টেম্বরে জমা পড়া ফরেন্সিক রিপোর্টে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ঘটনাটি সেমিনার রুমে না–ও ঘটে থাকতে পারে!

    রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, চারতলার সেমিনার রুমটি টিবি ওয়ার্ডের পাশে রয়েছে। তা কোনও ভাবেই লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল না। লাগোয়া করিডর দিয়ে ২৪ ঘণ্টাই রোগী এবং হাসপাতালের স্টাফরা যাতায়াত করেন। এমনকী, ওই ফ্লোরে নার্সদের বসার জায়গাও রয়েছে।

    আবার চেস্ট মেডিসিন বিভাগের মধ্যেই পড়ে সেমিনার হলটি। চারতলায় সেমিনার হলে যাওয়ার যে রাস্তা রয়েছে, সেখান দিয়ে সকলকে যাতায়াত করতে হয়। বাঁ দিকের সরু করিডরের পাশে রেসিডেন্ট ডাক্তারদের ঘর, লাইব্রেরি রুম এবং চেস্ট মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানের দপ্তর। নাগরিকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে, ‘এত জনের নজর এড়িয়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণীকে খুন এবং ধর্ষণ করা হলো, অথচ কেউ টের পেলেন না?’

    ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেমিনার রুমের পাশে ডাক্তারদের জন্য রেস্ট রুম একদম অপেশাদার ভাবে ভাঙা হয়েছিল। সেখানে নোংরা বিছানা, জিনিসপত্রও ছিল। নির্যাতিতার পরিজনদের প্রশ্ন, ‘কেন ওই ঘর মেরামত করার জন্য অপেক্ষা করা হলো না?’

    রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেমিনার রুমের পাঁচটি দরজার প্রতিটি করিডরের দিকে। কিন্তু, একমাত্র প্রথম দরজাটি কাজ করত বলে জানিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নেটিজেনদের প্রশ্ন, ‘ঘটনার দিন অন্য দরজা দিয়ে অভিযুক্তরা নির্যাতিতার দেহ সেমিনার রুমে রেখে যায়নি তো?’ তাঁদের আরও প্রশ্ন, ‘ভেঙে দেওয়া দেওয়ালের অংশে কেন বিদ্যুতের তারের সংযোগ ছিল?’

    রিপোর্টের সাত নম্বর পাতায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সেমিনার রুমের দরজা তালা দিয়ে বন্ধ করার পরে সাদা কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। সিল করা হয়নি।’ চিকিৎসকদের প্রশ্ন, ‘ ঘটনাস্থল কেন রক্ষা করার চেষ্টা হয়নি? ওই দরজা তো যে কেউ খুলে প্রমাণ নষ্ট করতে পারে!’ আবার রিপোর্টের শেষ পাতায় রয়েছে, ‘সেমিনার রুমের বিছানা এবং কাঠের স্টেজে ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। বিছানা বা ওই স্টেজ ছাড়া ঘরের অন্য জায়গায় রক্তের চিহ্নও পাওয়া যায়নি।’ নির্যাতিতা এবং অভিযুক্তের ধস্তাধস্তি হলে কি শুধু ওই জায়গাতেই হয়েছিল, তাও বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকে।

    আইনজ্ঞদের মতে, ‘এই ফরেন্সিক রিপোর্ট আরজি করের তদন্তের অভিমুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। কেন তদন্ত রিপোর্টে বিষয়গুলি উল্লেখ করলেন না তদন্তকারীরা, তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ থেকে যাচ্ছে।’

    অন্যদিকে, এদিন আরজি করের দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ ঘোষ, সুমন হাজরা সহ পাঁচজনকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। প্রসঙ্গত, আরজি করের দুর্নীতি মামলায় গত ২৯ নভেম্বর চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই।

  • Link to this news (এই সময়)