রূপক মজুমদার, বর্ধমান
নবাবহাট ও উল্লাস মোড়— জিটি রোড ও ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া এই দুই এলাকায় বাড়িভাড়া নেওয়ার যেন হিড়িক পড়ে গিয়েছে। বিষয়টি যে চোখে পড়ার মতো তা স্বীকার করে নিচ্ছেন সেখানে জমি–বাড়ির দালালি করা কারবারীরাই। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাতারাতি বাড়িভাড়া নেওয়া ভাড়াটেদের রোজগার নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
বেশিরভাগ ভাড়াটে নিজেদের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়ে নবাবহাট, উল্লাসের দুই উপনগরীতে বাড়িভাড়া নিয়েছেন। এঁদের কোনও তথ্য থানায় জমা পড়েনি বলে জানা গিয়েছে। জেলা পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, পুরো বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে।
নবাবহাটে বাড়িভাড়ার এক কারবারী বলেন, ‘ডিল ফাইনাল হলে আমরা সাধারণত এক মাসের ভাড়া নিয়ে থাকি। তেমন পার্টি হলে অতিরিক্ত ৪-৫ হাজার টাকাও দাবি করি। নবাবহাটে গত দু’মাসে আমি ১৬টি বাড়ি দেখে দিয়েছি। কেউ ১৫ হাজার, আবার কেউ আমাকে ১২ হাজার টাকা দিয়েছেন। প্রত্যেকেই ব্যবসা করেন বলে জানিয়েছেন। সন্তানদের পড়ানোর জন্য নাকি তাঁরা বর্ধমানে থাকছেন।’
উল্লাস মোড়ে একটি চায়ের দোকানের মালিক জানাচ্ছেন, বর্ধমান শহরে বাইরের অনেকেই বাড়ি, ফ্ল্যাট কিনে রেখেছেন। কেউ কলকাতায় চলে গিয়েছেন। ফাঁকা রাখবেন না বলে ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। চায়ের দোকানের ওই মালিক বলেন, ‘এই দু’তিন মাসে এখানে বাড়িভাড়া নেওয়ার একটা ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। ভাড়ার রেট নিয়েও কেউ দরাদরি করেননি। এখন এঁরা কারা, কী তাঁদের উদ্দেশ্য, এ সব তো জানা আমাদের কাজ নয়। দেখার হলে পুলিশ দেখুক।’
খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে জেলা পুলিশের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, ভাড়াটেদের বিস্তারিত তথ্য নিকটবর্তী থানায় অবশ্যই জমা দিতে হবে। বর্ধমান থানার আইসি নিজে মাইকে সেই প্রচার করেছিলেন। যদিও বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের কাছে এমন কোনও তথ্য এখনও আসেনি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘এখন কম্পিউটারের যুগ। খুব সহজেই আমরা ডেটাবেস তৈরি করে রাখতে পারি। মানুষ সচেতন না হলে তো সমস্যা। পরে কোনও ঘটনা ঘটে গেলে তার দায় এসে পড়বে আমাদের উপর।’
বাংলাদেশে পালাবদলের পরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)। এ রাজ্যের সঙ্গে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেও তাদের স্লিপার সেল সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সাহায্য নিয়ে এবিটি–র আট জঙ্গিকে বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাকড়াও করেছে অসম এসটিএফ। তার মধ্যে রয়েছে এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার দুই জঙ্গি। এর পরেই বর্ধমান নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের মতে, জঙ্গি কার্যকলাপে বর্ধমান খুবই স্পর্শকাতর অবস্থায় রয়েছে। তবে একই সঙ্গে তাঁরা মনে করছেন, জঙ্গিদের কাছে খাগড়াগড় এখন আর ‘সেফ’ আস্তানা নয়।
যে হেতু খাগড়াগড় চিহ্নিত এবং সবসময়ে আলোচনায় উঠে আসে, তাই এই এলাকা এড়িয়ে অন্যত্র ‘সেফ জোন’ তৈরিই লক্ষ্য জঙ্গিদের। তা হলে কি তারা নতুন কোনও জায়গা পছন্দ করে থাকতে শুরু করছে? জিটি রোড, জাতীয় সড়কের ধারে কিছু আবাসনে অনেকে চড়া দামেও বাড়িভাড়া নিয়েছেন। এমন বেশ কিছু ফ্ল্যাট ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের নজরদারি চলছে। পুরো বিষয়ের দিকে আমাদের মতো করে নজর রাখছি।’