‘সবাই বলছিল এজেন্ট হতে।’ ক্যানিং থেকে ধৃত জঙ্গি জাভেদ মুন্সির এই দাবি শুনে গোড়ায় খানিকটা চমকেই গিয়েছিলেন কাশ্মীর পুলিশের আধিকারিকরা! ধরা পড়লে স্নায়ুর চাপ সরিয়ে রেখে কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে, হবু জঙ্গিদের সেই তালিম দিত জাভেদ।
সে নিজে আবার খাস লস্কর–ই–তইবার ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে এ বিষয়ে দড় হয়ে এসেছে। এ হেন জাভেদই পুলিশের জেরায় দাবি করেছে, শুধু লস্করই নয়, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাও তাকে চর হওয়ার অফার দিয়েছিল! আর এই জোড়া চাপের থেকে মুক্তি পেতেই তার পালিয়ে ক্যানিংয়ে আসা। যদিও জাভেদের ‘দক্ষতা’ মাথায় রেখে তার এই দাবি হজম করছেন না তদন্তকারীরা। কারণ ধরা পড়লে কী করতে হয়, সেটা তার ভালোই জানা।
জাভেদ ইমপ্রোভাইজ়ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরিতে দক্ষ। কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল নতুনদের মগজ ধোলাই এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া। ৯০–এর দশক থেকে একাধিক স্পর্শকাতর মামলায় তার নাম জড়িয়েছে। দিল্লির লোধি কলোনি বিস্ফোরণ মামলায় জেলও খেটেছে। লস্করের সঙ্গে দীর্ঘ যোগ, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) মুজফ্ফরাবাদে তার প্রশিক্ষণ হয়। আইইডি তৈরির প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পুলিশ বা সেনার হাতে ধরা পড়লে কী ভাবে জেরা সামলাতে হবে, সেই ট্রেনিংও তাকে দেওয়া হয়।
এ দেশে এলইটি–র সহযোগী সংগঠন তেহরিক–উল–মুজাহিদিনের ডিস্ট্রিক্ট কম্যান্ডার জাভেদ ১৯৯২–১৯৯৬ পর্যন্ত একাধিকবার পিওকে গিয়েছিল। ১৯৯৯–এ পাকিস্তান থেকে আরডিএক্স পেয়ে নেপাল সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে ২ কেজি বিস্ফোরক–সহ দিল্লিতে ধরাও পড়ে। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে ফের সক্রিয় হয় সে। সম্প্রতি এলইটি হ্যান্ডলারেরা ফের জাভেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ডেকে পাঠায়। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্তের অবস্থা কেমন, সেই তথ্য চাওয়া হয় বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। তবে ছাড়া পাওয়ার পরেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এবং কাশ্মীর পুলিশের নজরে ছিল জাভেদ।
সোমবার সকালে জাভেদকে শ্রীনগরে নিয়ে যাওয়া হয়। শাহিদনগর থানায় তাকে জেরা করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় সে দাবি করেছে, পিওকে–তে তাকে তলব করা হলেও সে যেতে চায়নি। কিন্তু তার উপরে ক্রমাগত নজর রেখে চলা ভারতীয় গোয়েন্দারা এই খবর জেনে তাকে পিওকে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল যাতে সীমান্তের ওপারের খবর সহজে নাগালে আসে। জাভেদের দাবি, চাপ বাড়াতে তার বিরুদ্ধে ২০১১–এর একটি খুনের মামলা নতুন করে শুরু করা হয়। ধৃতের দাবি, এ সব থেকে বাঁচতেই সে ক্যানিংয়ে পালিয়ে এসেছিল।
জাভেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পরে তার শ্যালকদের বিষয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে এ রাজ্যের পুলিশ। তবে সূত্রের খবর, কাশ্মীর পুলিশের কাছ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও আপত্তিকর তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকী, জাভেদ তাদের না জানিয়েই আচমকা চলে এসেছিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত তাঁদের বক্তব্যে কোনও অসঙ্গতি ধরা পড়েনি বলে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স সূত্রে জানা গিয়েছে।