এই সময়, কলকাতা ও লালগোলা: যিনি পিসেমশাই, তিনিই শ্বশুর। তাঁরই নাম বাবার জায়গায়!
এমন ঘটনা দেখে খানিকটা অবাক পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। এ প্রসঙ্গে উঠে এসেছে সোহেল রানার নাম। যাকে বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে সোমবার গ্রেপ্তার করেছে মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানার পুলিশ।
তদন্তে উঠে এসেছে, ন’বছর আগে বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত টপকে ভারতে ঢুকেছিল সোহেল। লালগোলা এলাকায় থাকতেন সোহেলের পিসি শেফালি বিবি। সোহেল এসে সেখানেই ওঠে। এখানেই শেষ নয়, পিসির মেয়ে সেলিনা খাতুনকে বিয়েও করে সোহেল। এর ফলে, সেলিনার বাবা, যিনি একসময়ে সোহেলের পিসেমশাই ছিলেন, সেই আবদুল রশিদ হয়ে যান সোহেলের শ্বশুরমশাই।
ভারতে পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতে দালালের মারফত সোহেল ভারতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে নেয়। সেই ভারতীয় আধার কার্ডে নিজের বাবার জায়গায় উল্লেখ করেন সেই আবদুল রশিদের নামই। জেরায় সোহেল জানিয়েছে, বাংলাদেশে রাজশাহীর বাসিন্দা তার ‘আসল’ বাবার নাম সাইফুল ইসলাম। রাজমিস্ত্রির পরিচয়ে চেন্নাই, কেরালা–সহ বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করত সে। এ ভাবেই বছরের পর বছর এ দেশে আত্মগোপন করেছিল সোহেল।
সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের এসটিএফ এবং অসম পুলিশের যৌথ অভিযানে আটজন সন্দেহভাজন জঙ্গি ধরা পড়েছে। ধৃতদের মধ্যে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে মিনারুল শেখ এবং মহম্মদ আব্বাস। তারপর থেকেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে চিরুনি তল্লাশি। কোথায় কোন বাংলাদেশি লুকিয়ে বসে রয়েছে, তা খুঁজতে গিয়েই সোমবার পুলিশের জালে সোহেলের সঙ্গে ধরা পড়েছে অলিউল আলম। সোহেলকে ভোটার এবং আধার কার্ড তৈরি করতে অলিউলের পাশাপাশি লালাগোলা থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার সাহয্য করেছিল বলে পুলিশের দাবি। মঙ্গলবার ধৃতদের লালবাগ মহকুমা আদালতে পেশ করা হল পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
লালগোলার বালিগ্রামে বাড়ি অলিউলের। অভিযোগ, বাংলাদেশিরা বেআইনি ভাবে এ দেশে ঢোকার পরে পরিচয়পত্র তৈরি করতে সাহায্য করত সে। তাকে জেরা করে জলঙ্গি থানার দয়ারামপুরের বাসিন্দা সাহারুল মোল্লা নামে এক ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই চক্রে আর কারা রয়েছে, তার তালিকা তৈরি করছে রাজ্য পুলিশ। সোহেলের শ্যালক সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোহেল আমার মামার ছেলে। এক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এসে আমার বোনকে বিয়ে করেছিল। এর পর, আমার বাবার নাম ব্যবহার করে নকল আধার কার্ড তৈরি করে ভারতেই থেকে যায়। চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করত সে। কয়েক মাস আসে চেন্নাই থেকে ফিরে আসে। সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি। পরে জানা যায় পুলিশ ওকে গ্রেপ্তার করেছে।’