দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
কখনও ডিজ়নিল্যান্ড। কোনও বছর বাংলার রসগোল্লা। এর সঙ্গে জলপাইগুড়ির নানা দ্রষ্টব্য— কোচবিহারের রাজবাড়ি কিংবা সার্কিট বেঞ্চ। এমন নানা আদলে ফ্রুট কেক তৈরি করা হয়েছে অতীতে। আজ, বড়দিনে কী কেক ক্রেতাদের সামনে নিয়ে আসা হবে, তা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গোনা চলছে। সেই কেকের নিলাম হবে। টাকা ফেললেই কেক কেনা যাবে, তা নয়। কেক যে একটাই! তাই যে বেশি দর হাঁকবেন, কেক তাঁরই।
কেক নিলামে তোলার চমকপ্রদ পরিকল্পনা যাঁর মাথা থেকে বেরিয়েছে, তিনি জলপাইগুড়ি শহরের একজন বাণিজ্যসফল নারী। সেই ১৯৯৮ সালে শুরু হয়েছে তাঁর সফর। ২৬ বছর ধরে একটানা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরের মানুষরে রসনা পরিতৃপ্ত করে চলেছেন রঞ্জনা সাহা।
আড়াই দশক আগে জলপাইগুড়ি শহরে নামী বেকারিগুলির রমরমা ব্যবসা ছিল। নানা রকমের বিস্কুট, সাধারণ মানের কেক তৈরি হতো। এমন আবহে কনফেকশনারির ব্যবসা খোলেন রঞ্জনা। এখন যে সব নামজাদা সংস্থার চেন শহরে শহরে খুলেছে, সে সব তখন ছিল না। অনেকেই সে সসম ভেবেছিলেন, সফল হবেন না রঞ্জনা। কিন্তু গত ২৬ বছরে এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন তিনি।
ব্যবসায়ী পরিবারের জন্ম হওয়ার সুবাদে ছোটবেলায় আবহই ছিল আলাদা। বড় হয়ে ব্যবসার হাল ধরতে হবে, এই মানসিকতা তৈরি করে ফেলেন রঞ্জনা। কিন্তু তিনি নিজেই যে একদিন কনফেকশনারি তৈরি করে ফেলবেন, সেটা ভাবতে পারেননি। বলেন, ‘জলপাইগুড়ি শহরে প্রথমে আমাদের নার্সিংহোম ছিল। বাবার অসুস্থতা ও অন্যান্য সমস্যার জন্য সেটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু সংসার চালাতে গেলে কিছু তো করতে হবে। তাই একদিন বাবার সঙ্গে কথা বলে কনফেকশনারি খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
এরপর কনফেকশনারির বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন রঞ্জনা। বিভিন্ন রকমের যন্ত্রপাতি, ওভেন কিনতে থাকেন। বলেন, ‘কলকাতা এবং পাকুড় থেকে কারিগর নিয়ে এসে ১৯৯৮ সালে জলপাইগুড়ি শহরে প্রথম কনফেকশনারি খোলা হয়। সেই সময় কেবল প্যস্ট্রি, প্যাটিস আর কেক তৈরি করা হতো।’ এর পরেও রাস্তা মসৃণ ছিল না। বিভিন্ন বাধাবিঘ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু তার পরেও হার না মেনে, নিজেই গাড়িতে করে কেক-প্যাস্ট্রি সরবরাহ করেছেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রঞ্জনার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাবারের চাহিদা বাড়তে থাকে। কাজের চাপ সামাল দিতে বেকার তরুণদের নিয়োগ করা হয়। ব্যবসা বড় হতে থাকে। এখন জলপাইগুড়ি ছাড়াও মালবাজার, রাজগঞ্জ, ময়নাগুড়ি, হলদিবাড়ি, বেলাকবা, ধূপগুড়ি-সহ বিভিন্ন জায়গায় কাউন্টার রয়েছে রঞ্জনার। বলেন, ‘তখন ছিল তিন রকমের আইটেম। এখন ৩০ রকমের আইটেম তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভেজ-ননভেজ সবই আছে।’ ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজ করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। কয়েকজন দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীকে টিউশন ফি দেওয়া হয়। পুজোর সময়ে চা বাগান শ্রমিকদের নতুন বস্ত্র, হুইলচেয়ার, শোনার যন্ত্রও দেওয়া হয়।
এ বারও রঞ্জনা নিলামে তুলতে চলেছেন একটি বড়সড় কেক। রতন টাটার স্মৃতিতে তাজ হোটেলের আদলে তৈরি হচ্ছে বড়দিনের কেক। ৬০ পাউন্ড তো ওজন হবেই। নিলামে এ বার দাম কত উঠবে? উত্তর পেতে আজ, বুধবার বেলা বারোটা নাগাদ আসতে হবে জলপাইগুড়ির কাউন্টারে।